
ঋণের বোঝায় জর্জরিত ২৮ বছর বয়সী মো. রিফাত যখন টাকা পরিশোধের চিন্তায় দিশেহারা, তখন এক বন্ধুর কুপরামর্শ তার জীবনকে আরও অন্ধকারে ঠেলে দেয়। সেই বন্ধুর পরামর্শে, অটো রিকশা ছিনতাই করে বিক্রির লোভে ১৯ বছর বয়সী বন্ধু মো. তাফরুল ইসলাম সৈকতকে গভীর রাতে কুপিয়ে হত্যা করে তার রিকশাটি ছিনিয়ে নেয় রিফাত।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাহেরগড়া এলাকায় ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক ঘটনার কথা আজ বৃহস্পতিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন রিফাত। সে চৌদ্দগ্রামের কনকাপৈত ইউনিয়নের আতাকরা ভূঁঞাবাড়ির বাসিন্দা।
চৌদ্দগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘটনার বিস্তারিত তথ্য নিশ্চিত করেন।
ওসি জানান, গত ৩ জুলাই সন্ধ্যায় বাহেরগড়া এলাকার নাঙ্গুলিয়া খালের লক্ষ্মীপুর কালভার্টের নিচ থেকে এক তরুণের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিন রাতেই খায়রুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি লাশটি দেখে তার ছেলে সৈকতের বলে শনাক্ত করেন। সৈকত চৌদ্দগ্রাম বাজারে অটোরিকশা চালাতেন এবং ২ জুলাই রিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি।
সৈকতের লাশ উদ্ধারের পর ৩ জুলাই রাতেই তার বাবা খায়রুল অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশ বিভিন্ন ব্যক্তিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। অবশেষে, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গতকাল বুধবার গভীর রাতে রিফাতকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রিফাত স্বীকার করে যে, অটোরিকশা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা নিয়েই সে ২ জুলাই রাতে সৈকতের রিকশা ভাড়া করে লক্ষ্মীপুর কালভার্ট এলাকায় যায়। সেখানে পৌঁছানোর পর সৈকত কারণ জানতে চাইলে রিফাত তাকে জানায় যে এই সড়ক দিয়ে মাদকের একটি চালান যাবে, যা আটক করে বিক্রি করলে মোটা অঙ্কের টাকা পাওয়া যাবে। এরপর রাত পেরিয়ে ভোর হতেই রিফাত পেছন থেকে সৈকতের ঘাড়ের ওপর ধারালো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে সজোরে আঘাত করে। মুহূর্তে সৈকত লুটিয়ে পড়লে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে লাশ খালে ফেলে দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে ওসি আরও বলেন, “রিফাত লাশ ফেলে দিয়ে অটোরিকশাটি নিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। কিন্তু এটি বিক্রি করতে না পেরে বাবুচি এলাকায় ফেলে যায়। আমরা সৈকতের লাশ উদ্ধারের পরদিন অটোটি উদ্ধার করি।” তিনি জানান, বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ১৬ জুলাই গভীর রাতে রিফাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রিফাত খুনের সঙ্গে একাই জড়িত বলে স্বীকার করেছে। তবে বন্ধুর প্ররোচনার কথাও সে আদালতে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছে।