নভেম্বর ২৫, ২০২৪

সোমবার ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

উদ্বোধনের ৮ মাসেও চালু হয়নি কুবির শিক্ষক ডরমিটরি

উদ্বোধনের ৮ মাসেও চালু হয়নি কুবির শিক্ষক ডরমিটরি
উদ্বোধনের ৮ মাসেও চালু হয়নি কুবির শিক্ষক ডরমিটরি। ছবি: কুবি প্রতিনিধি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের জন্য নবনির্মিত ডরমেটরি উদ্বোধনের ৮ মাস পরও চালু হয়নি। চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি ডরমিটরির উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

গত ২রা আগষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. আমিরুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে শিক্ষকদের নতুন ডরমিটরিতে সিটের জন্য আবেদন করতে বলা হয়।

তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৩৮টি সিটের বিপরীতে আবেদন করেছেন ৮ জন শিক্ষক। ব্যক্তিগতভাবে রান্নার সুযোগ না থাকা, ভাড়া বেশি হওয়া, সাপের উপদ্রব বেশি হওয়ার শঙ্কা, দূরত্ব বেশি অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটসাইটে অবস্থান হওয়াসহ নানা সমস্যা থাকায় নতুন ডরমিটরিতে শিক্ষকরা উঠছেন না।

জানা যায়,২০১৭ সালের মে মাসে ডরমেটরির নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের নভেম্বরে। কিন্তু ডরমিটরির নির্মাণ কাজের সময়সীমা কয়েকদফা বাড়িয়ে এর নির্মাণ কাজ শেষ করা হয় ৫ পাঁচ বছর পর।

তবে চলতি বছরে উদ্বোধন হলেও কেন শিক্ষকদের এখানে উঠানো হয়নি বা শিক্ষকরা কেন উঠেনি সেদিকে রয়েছে নানা প্রশ্ন। তবে শিক্ষকদের ভাষ্য, নানা প্রতিকূলতা ও নানা অসুবিধার কথা বিবেচনা করে তারা সেখানে উঠছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকা ব্যয়ে শিক্ষকদের জন্য নতুন একটি ডরমিটরি নির্মাণ করা হয়। তবে উদ্বোধনের ৮ মাস পার হলেও এখনো শিক্ষকরা ডরমিটরিতে উঠতে পারেননি। তবে শিক্ষকদের ভাষ্য, বেশকিছু সমস্যা ও পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না থাকার কারণে সেখানে উঠতে তারা অপারগতা প্রকাশ করছেন।

এদিকে নানা অপ্রতুলতা নিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন ২টি ডরমিটরিতে কর্মকর্তাদের সাথে ভাগাভাগি করে থাকছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

জানা যায়, ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে শিক্ষক রয়েছেন ২৬৫ জন। যার মধ্যে মাত্র ২৮ জন শিক্ষক পাচ্ছেন আবাসন সুবিধা। যা মোট শিক্ষকদের তুলনায় ১০ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট কর্মকর্তাদের মধ্যে ডরমিটরিতে থাকছেন ১০ জন।

পাঁ তলা বিশিষ্ট দুটি ডরমেটরিতে নানা অপ্রতুলতা নিয়ে বসবাস করছেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা। পুরাতন ডরমিটরিগুলো ঘুরে দেখা যায়, ভবন দুটির বহিরাংশের রং বিবর্ণরূপ ধারণ করেছে অনেক আগে থেকেই। অনেক স্থানে রং খসে পড়ে গেছে। ভবনের ভিতর এবং বাইরের অংশ অপরিচ্ছন্ন।

এছাড়াও অধিকাংশ কক্ষের বৈদ্যুতিক পয়েন্টগুলো ত্রুটিপূর্ণ। অন্যদিকে ডরমিটরিগুলো পাহাড়ের উপর হওয়ায় সাপের উপদ্রবসহ নানা কীটপতঙ্গের উৎপাতে ভীত থাকেন শিক্ষক ও কর্মকর্তারা।

গত ২রা আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) আমিরুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে নবনির্মিত ডরমিটরি শিক্ষক, পুরাতন ডরমিটরি ভবন-২ কর্মকর্তা এবং পুরাতন ডরমিটরি ভবন-১ কর্মচারীদের আবাসন বরাদ্দের জন্য বণ্টন করা হয়েছে।

পাশাপাশি পূর্বে বরাদ্দপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মকর্তাদেরকেও পুনরায় আবেদন করতে বলা হয়। ভবনগুলোতে বরাদ্দের জন্য ১০ আগস্টের মধ্যে আবেদন করতে বলা হলেও নবনির্মিত শিক্ষক ডরমিটরিতে ৩৮ টি সিটের বিপরীতে আবেদন করেছেন মাত্র ৮ জন শিক্ষক। শিক্ষকদের অভিযোগ নতুন ডরমিটরিতে সুবিধার চেয়ে অসুবিধা বেশি৷ শিক্ষকরা সেখানে যেতে অনাগ্রহী বলেই কেউ আবেদন করছেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, ‘পুরাতন ডরমিটরিতে অবস্থানরত অধিকাংশ শিক্ষকই বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজে জড়িত। নতুন ডরমিটরিটি আউটসাইডে হওয়ার কারণে শিক্ষকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হবে। এছাড়াও অনেক শিক্ষককে রান্না করে খেতে হয়।

কিন্তু নতুন ডর্মে ব্যক্তিগতভাবে রান্না করার সুযোগ না থাকার কারণে শিক্ষকদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে। একইরকম পাহাড়ি পদতলে নির্মিত হওয়ায় কারনে সেখানেও সাপের উপদ্রব রয়েছে। তাই সমস্যা বিবেচনায় আমরা সেখানে যেতে চাই না। যেখানে আছি সেখানেই থাকতে চাই। এরপরেও যদি সেখানে থাকতে বলা হয় তাহলে বাইরে থাকবো।’

পুরাতন ডরমিটরিতে অবস্থানকারী একাধিক শিক্ষকের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। যারা বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্বে রয়েছেন। তাদের একজন শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। নির্ধারিত সময় পরেও সিট বরাদ্দের জন্য আবেদন করেননি।

তিনি বলেন, আমি এ ব্যাপারে জানি না। পুরাতন ডরমিটরিতে বসবাসকারী আরেকজন শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অমিত দত্ত। তিনি এ বিষয়ে বলেন, ‘আমি বেশ কিছুদিন অসুস্থ থাকায় এ ব্যাপারে কিছু জানিনা। আমার জানামতে পুরাতন ডরমিটরির কোন শিক্ষক সিট বরাদ্দের জন্য আবেদন করেননি। আমি এটা নিয়ে প্রয়োজনে এস্টেট শাখায় কথা বলবো।’

নথিপত্র গেঁটে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৭ মে ৫ কোটি ২৩ লাখ ৪৯ হাজার ৯৬৪ টাকা ৫১ পয়সা বাজেট বরাদ্দ নিয়ে নতুন ডরমিটরি নির্মাণের কাজ শুরু হয়। পরবর্তীতে এই বাজেট বৃদ্ধি বেড়ে ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকায় উন্নিত করা হয়। ঐ বছরেই ২ কোটি ৮ লাখ ৮৯ হাজার ৮০ পয়সা বাজেটে শুরু হয় ক্লাব কাম গেস্ট হাউজের নির্মাণ কাজ।

পরে এর বাজেটও বেড়ে দাঁড়ায় ২ কোটি ৪০ লাখ ৩৯ হাজার টাকাতে। ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেই কাজ শেষ হয় পাঁচ বছর পর। সর্বশেষ গত ১৯ জানুয়ারি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি স্থাপনা দুটির উদ্বোধন করেন।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি স্থাপনা দুটির উদ্বোধন করেন
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি স্থাপনা দুটির উদ্বোধন করেন

ভবন দুইটি নির্মাণে কয়েক কোটি টাকা ব্যয় হলেও উদ্বোধনের ৮ মাস পরেও অব্যবহৃত রয়েছে। এমনকি সেখানে উঠতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন অনেক শিক্ষক। তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, নতুন ডরমিটরিতে শিক্ষকদের প্রাইভেসির সমস্যা হবে এবং সেখানে সাপের উপদ্রব আরও বেশি থাকবে।

এখানে আমরা ব্যক্তিগতভাবে রান্না করে খাওয়ার সুযোগ পাই, যা সেখানে পাবো না। তবুও যদি প্রশাসন আমাদেরকে সেখানে যেতে বলে তাহলে আমরা যাবো।

ডরমিটরিতে অবস্থানরত একজন শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কখনো কর্মকর্তাদের সাথে একই ডরমিটরিতে থাকতে পারে না। একটা আবাসস্থলে থাকার জন্য যেসকল সুযোগ-সুবিধা থাকা দরকার সেখানে তার কিছুই নেই।

এসব বিষয়ে কথা বলতে চাইলে এস্টেট শাখার পরিচালক ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো: মিজানুর রহমান বলেন, নতুন ডরমিটরিতে ভাড়া বেশি হওয়ার কারণে শিক্ষকরা উঠতে আপত্তি জানাচ্ছেন। আমরা এটা নিয়ে উপাচার্যের সাথে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন শিক্ষকদের সাথে কথা বলে বিষয়টি সুরাহা করবেন।

আমাদের কর্মচারীদের জন্য থাকার জায়গা নেই। এখন আমাদের পুরাতন দুটি এবং নতুন একটি নিয়ে মোট তিনটি ডরমিটরি হয়েছে। আমরা তিনটি ভবন তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে একটি শিক্ষকদের, একটি কর্মকর্তাদের ও একটা কর্মচারীদের থাকার ব্যবস্থা করবো।

পুরাতন ডরমিটরিতে যেসকল শিক্ষক থাকেন তাদেরকে নতুন ডরমিটরিতে স্থানান্তর করা হবে। এই ভবনটি নকশা অনুযায়ী বানানো হয়েছে। যার কারণে প্রতিটি রুমে চুলা দেওয়া হয়নি। এটা যেহেতু পাহাড়ি এলাকা এখানে সাপের উপদ্রব থাকবেই। এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা কার্বলিক এসিড দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।

এ বিষয়ে কথা বলতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও বরাবরের মতো তাঁর মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বরাদ্দ দেওয়ার কমিটি নেই তাই এখনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। আমরা এটি যখন উদ্বোধন করেছিলাম তখন ফার্নিচার ছিল না। এখন ফার্ণিচার এসেছে। আমরা বরাদ্দের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলাম সেখানে কিছু শিক্ষক আবেদন করেছেন।

আমি উপাচার্যের সাথে কথা বলে রুম বরাদ্দ দেওয়ার জন্য একটি কমিটি করার ব্যবস্থা করবো। এ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। নতুন ভবনে ভাড়া বেশি আর কিচেন নিচে থাকায় অনেক শিক্ষকদের সেখানে যেতে অনীহা রয়েছে।