
রাজধানী ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিমানবাহিনীর এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। উড্ডয়নের ১২ মিনিটের মাথায় বিধ্বস্ত হয় বিমানটি। এতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০ ও আহত ১৭১।
দগ্ধ ও আহতদের দেখতে অনেকেই হাসপাতালে ভিড় করছেন। তাদের ভিড় না করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা। সংক্রমণ এড়াতে সাতটি পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সোমবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড পোস্টে তিনি এ পরামর্শ দেন।
তার পোস্টটি রাইজিং কুমিল্লার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
‘আজকের দুর্ঘটনায় অনেক শিশু গুরুতর পোড়া আঘাত নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি। এ রকম ঘটনায় রোগীর জীবন বাঁচানোর পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ, তাকে ইনফেকশন থেকে রক্ষা করা।
আমরা সবাই সাহায্য করতে চাই। কিন্তু অনেক সময় না জেনে কিছু করলে ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ে। আর পোড়ার পরের ইনফেকশন সাধারণ ইনফেকশনের মতো না। এটা অনেক বেশি মারাত্মক হতে পারে।
কারণ পোড়ার ফলে ত্বকের বাইরের স্তরটা ধ্বংস হয়ে যায়। কখনো কখনো ত্বকের সবগুলো স্তরই ধ্বংস হয়ে যায়। অথচ এ ত্বকই আমাদের শরীরের সবচেয়ে বড় সুরক্ষা-পর্দা। ব্যাকটেরিয়া আর অন্যান্য জীবাণু যাতে শরীরে ঢুকতে না পারে, সেটাই ছিল এর কাজ। যখন ত্বক পুড়ে যায়, তখন শরীর উন্মুক্ত হয়ে পড়ে ইনফেকশনের কাছে।
এ ছাড়া পোড়া রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অনেক সময় কমে যায়। শরীর প্রচুর তরল ও প্রোটিন হারায়, রক্তে বিভিন্ন জটিলতা তৈরি হয়। এসব মিলিয়ে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়তে খুব অল্প সময় লাগে। শুরুতে সামান্য জ্বর দিয়ে শুরু হলেও, সেটা দ্রুত রক্তে ছড়িয়ে গিয়ে সেপসিস করতে পারে, যা অনেক সময় মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়।
তাই যারা রোগীকে দেখতে যাচ্ছেন বা বিভিন্নভাবে রোগীকে সাহায্য করার চেষ্টা করছেন, তাদের জন্য কিছু তথ্য। এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে বড় ক্ষতি এড়ানো সম্ভব:
১। রোগীর আশেপাশে ভিড় করবেন না। যদি কোনো কারণে যেতেই হয়, ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে যাবেন। রোগীর বেড বা ফার্নিচার স্পর্শ করবেন না। গ্লাভস, মাস্ক, গাউন ব্যবহার করতে পারলে আরও ভালো।
২। ৭০% অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনে রাখুন। কেউ যদি দেখতে আসেন, তাকে রোগীর বিছানায় না বসতে বলুন।
৩। অনেকেই প্রাথমিকভাবে পোড়া জায়গায় ডিম, টুথপেস্ট বা ঘরোয়া কিছু লাগান। দয়া করে এসব করবেন না। এগুলো ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ায়, আর পোড়া জায়গার আসল অবস্থা বোঝাও কঠিন হয়।
৪। ড্রেসিং পরিবর্তনের আগে ও পরে ভালো করে হাত ধুতে হবে। কোনো কারণে যদি আপনার ড্রেসিং পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে ডাক্তার বা নার্সদের কাছ থেকে ভালো করে শিখে নিতে হবে কীভাবে ড্রেসিং করতে হয়। না জেনে এ কাজে হাত দেওয়া ঠিক না।
৫। প্রতিবার ড্রেসিংয়ের সময় পোড়া জায়গা খেয়াল করে দেখতে হবে। যদি ফোলা বাড়ে, ব্যথা বেড়ে যায়, বা পুঁজের মতো কিছু দেখা যায়, অবিলম্বে চিকিৎসককে জানাতে হবে।
৬। যেসব রোগীর শ্বাসনালী পুড়ে গেছে, তাদের যদি শ্বাসকষ্ট বা বুকে ব্যথা হয়, দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৭। টিটেনাস টিকা দেওয়া আছে কিনা জেনে নেবেন। না থাকলে চিকিৎসককে জানাতে হবে।
এ কথাগুলো এখন জানলে, আজকে যারা হাসপাতালে আছেন, তাদের অনেকের জীবন বাঁচাতে আপনি ভূমিকা রাখতে পারবেন।