জুন ২, ২০২৫

সোমবার ২ জুন, ২০২৫

ঈদের হাটে কুমিল্লায় ১৫০০ কোটি টাকার পশু বিক্রির সম্ভাবনা!

Rising Cumilla -Cumilla has the potential to sell livestock worth Tk 1,500 crore at the Eid market
ছবি: সংগৃহীত

আর মাত্র কয়েক দিন বাকি পবিত্র ঈদুল আজহার। এদিকে জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গড়ে প্রতিটি গরুর দাম ৮০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা এবং ছাগলের দাম ১৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে রয়েছে। এই হিসেবে এবার কুমিল্লার হাটে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকার পশু বেচাকেনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিক্রেতারা বলছেন, পশুপালনে এবার খরচ বেড়েছে অনেক। তাই কম দামে পশু বিক্রি করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, দাম কিছুটা বাড়া অস্বাভাবিক না হলেও, ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫-২০ শতাংশ বেশি দাম চাইছেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কুমিল্লার চাহিদা ২ লাখ ৩৬ হাজার পশু, তবে প্রস্তুত আছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬৭০টি পশু। এর মধ্যে ১ লাখ ৯১ হাজার গরু, ৫৬ হাজার ৯৪০ ছাগল, ১১ হাজার ৮০৫ ভেড়া, ৬০৮ মহিষ এবং ৩১৭টি অন্যান্য পশু রয়েছে।

খামারিরা বলছেন, দেশি জাতের গরু ও ছাগলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। দাউদকান্দির খামারি মো. ফজলুল হক জানান, এবার মাঝারি ও বড় আকারের দেশি গরু বেশি এসেছে। দেশি গরুর গুণগত মান ভালো হলেও, খাদ্যের দাম বাড়ায় লালনপালনের খরচ বেড়েছে। বুড়িচংয়ের খামারি শাহাদাত মিয়াও একই কথা বলছেন, “তিনটি গরু প্রস্তুত করেছি। খরচ বেশি হওয়ায় লাভ ছাড়া বিক্রি সম্ভব নয়।”

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ক্রেতারা মানসম্পন্ন পশু চাইলেও দাম নিয়ে চলছে তুমুল দর-কষাকষি। চৌদ্দগ্রামের ব্যবসায়ী রফিকুল হক বলেন, “বাড়িতে লালিত গরুর চাহিদা বেশি, তবে ক্রেতারা দাম কমাতে চান।” কুমিল্লা সদরের আব্দুল মান্নান নামে এক ক্রেতা জানান, মাঝারি গরুর দাম ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাওয়া হচ্ছে, যা গত বছরের তুলনায় ১৫-২০ শতাংশ বেশি। তবে কেউ কেউ গুণগত মান বিবেচনায় এই দামকে যুক্তিসঙ্গত মনে করছেন।

কোরবানির হাটের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জেলা প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রতিটি হাটে বর্জ্য অপসারণের জন্য নির্দিষ্ট ডাম্পিং স্থান, মোবাইল ক্লিনিং টিম এবং নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলবে। জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সার বলেন, “পরিবেশ রক্ষায় বর্জ্য অপসারণে বিশেষ টিম কাজ করবে। হাট শেষে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এলাকা পরিষ্কার করা হবে।”

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার জানান, ৩৬ হাজার খামারি এবার পশু প্রস্তুত করেছেন। খামারিরা প্রাকৃতিক খাবারে গরু পালনে উৎসাহিত হচ্ছেন, যে কারণে খামারের গরুর প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। তিনি আরও জানান, প্রতিটি হাটে মেডিকেল টিম, জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিন, ব্যাংক বুথ ও সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা রয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারি চিকিৎসক দল প্রতিটি হাটে উপস্থিত থাকবে। কোনো পশুকে কৃত্রিম খাবার দিয়ে মোটাতাজা করা হয়েছে বলে মনে হলে, সেই পশু বিক্রির অযোগ্য ঘোষণা করা হবে।

কুমিল্লার পশুর হাটে প্রাকৃতিক উপায়ে পালিত পশুর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তবে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খামারিরা কিছুটা চাপে আছেন। এই পরিস্থিতিতে কোরবানি সামনে রেখে দামের ওঠানামা কতটা স্থিতিশীল হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

আরও পড়ুন