জুন ৬, ২০২৫

শুক্রবার ৬ জুন, ২০২৫

ঈদুল আযহার শিক্ষা ও বাস্তবতা

প্রতীকি ছবি/রাইজিং কুমিল্লা

মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর আত্মত্যাগ ও আল্লাহর প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্যের অনন্য নজির স্মরণ করে পালিত হয় এই ঈদ। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এটি কেবল পশু কোরবানির দিন নয়, বরং আত্মশুদ্ধি, ত্যাগ, এবং মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হওয়ার এক তাৎপর্যময় উপলক্ষ।

ঈদ উল আযহার শিক্ষা

১. আত্মত্যাগের আদর্শ:
ঈদ উল আযহার মূল শিক্ষা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সবকিছু ত্যাগের মানসিকতা গড়ে তোলা। হজরত ইব্রাহিম (আ.) নিজের প্রিয় সন্তান ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি দিতে প্রস্তুত হয়েছিলেন শুধুমাত্র আল্লাহর আদেশ পালনের জন্য। এ ঘটনা আমাদের শেখায়, ঈমানদার ব্যক্তিকে যে কোনো পরীক্ষা ও ত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

২. আনুগত্য ও ঈমানের পরীক্ষা:
কোরবানি কেবল পশু জবাই নয়, বরং নিজের ভেতরের অহংকার, লোভ, হিংসা, হিংস্রতা ইত্যাদি পশুত্বকে বধ করার এক প্রতীকী শিক্ষা। এটি ঈমানের দৃঢ়তা এবং আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতা যাচাইয়ের এক উপলক্ষ।

৩. সহমর্মিতা ও দানবোধ:

কোরবানির মাংস বিতরণে ধনী-দরিদ্রের ভেদাভেদ ভুলে এক ধরনের সামাজিক সমতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে ওঠে। এটি দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফোটায় এবং সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠার পথে ভূমিকা রাখে।

৪. সংহতি ও শান্তির বার্তা:
ঈদ উল আযহা সবার জন্য একসাথে খুশি উদযাপন এবং পারস্পরিক সৌহার্দ্যের একটি মঞ্চ। পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হয় এই উৎসবের মাধ্যমে।

বাস্তবতা:

যদিও ঈদ উল আযহার পেছনে রয়েছে গভীর মানবিক শিক্ষা, কিন্তু বর্তমানে এর উদযাপন অনেক সময় বাহ্যিকতা আর প্রতিযোগিতার রূপ নিয়েছে। দেখা যায়—

প্রদর্শনবাদিতা:
অনেকেই কোরবানিকে লোক দেখানোর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। কে কত বড় গরু বা মহিষ কোরবানি দিলো, তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলে প্রতিযোগিতা। এর মাধ্যমে মূল আত্মিক শিক্ষা চাপা পড়ে যায়।

পরিবেশ দূষণ:
পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যবিধি ও পরিচ্ছন্নতার অভাব অনেক সময় ঈদের পরিবেশকে বিশৃঙ্খল করে তোলে। এটি কেবল সৌন্দর্যহানি নয়, বরং জনস্বাস্থ্যের জন্যও হুমকি।

অসাম্য:
কোরবানির মাংস সঠিকভাবে বিতরণ না হলে সমাজের প্রকৃত দরিদ্র ও অভাবী শ্রেণি উপকৃত হয় না। অনেকে একাধিক পশু কোরবানি করেও তার যথাযথ বণ্টন নিশ্চিত করেন না।

ঈদ উল আযহা আমাদের মনে করিয়ে দেয়— আসল ত্যাগ হলো নিজের ভেতরের নেতিবাচক দিকগুলোকে পরিত্যাগ করা। কোরবানি যেন কেবল রীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং তা হয়ে উঠুক আত্মশুদ্ধি ও মানবকল্যাণের অনুশীলন। সমাজের সব শ্রেণির মানুষের প্রতি সহমর্মিতা, সচেতনতা ও সম্মান বজায় রেখে ঈদ উদযাপন করলেই আমরা এই উৎসবের প্রকৃত শিক্ষা বাস্তবায়ন করতে পারব।

এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া। এমনিভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের বশ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা কর এ কারণে যে, তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। _(সূরা হাজ্জ, আয়াত ৩৭)

আরও পড়ুন