জাপানের প্রাক্তন পর্ন তারকা রে লিল ব্ল্যাক, যার প্রকৃত নাম কাই আসাকুরা, সম্প্রতি মালয়েশিয়া ভ্রমণের সময় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এক চাঞ্চল্যকর পরিবর্তন এনেছেন নিজের জীবনে। রে লিল ব্ল্যাকের এই ধর্মান্তর যেন এক গভীর আত্ম-অন্বেষণের প্রতিচ্ছবি, যেখানে অর্থ, জনপ্রিয়তা আর বাহ্যিক চাকচিক্যের মাঝেও অন্তরের নিঃসীম শূন্যতা তাকে এক নতুন পথের দিকে চালিত করেছে। সেই শূন্যতা কখনো ক্যামেরার ফ্ল্যাশে ভরেনি, কখনোই থামেনি করতালির শব্দে।
মালয়েশিয়া: আধ্যাত্মিক পরিবর্তনের কেন্দ্র
২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে রে লিল ব্ল্যাক মালয়েশিয়া ভ্রমণে যান মূলত অবসরযাপন, দেশটির সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও বিখ্যাত সব খাবার উপভোগ করার জন্য। আধ্যাত্মিক কোনো রূপান্তরের পরিকল্পনা তার ছিল না। কিন্তু ভাগ্য রে লিল ব্ল্যাকের জন্য অন্য পথ তৈরি করে রেখেছিল।
মালয়েশিয়ায় গিয়েই ঘটে রে লিল ব্ল্যাকের জীবনের মোড় ঘোরানো এক ঘটনা। পুরোনো এক বন্ধুর আমন্ত্রণে তিনি যান পুত্রজায়ার এক মসজিদে। সেখানেই এক নিবিড় দুপুরে, সাদা পাথরের মেঝে ছুঁয়ে প্রথমবারের মতো তিনি অনুভব করেন সেই শান্তি, যার নাম তিনি আগে কখনো শোনেননি।
মসজিদের ভেতরে সুনসান নীরবতার মাঝে প্রার্থনায় নিমগ্ন মুসল্লিদের দেখে রে লিল ব্ল্যাকের অন্তরে যেন এক সজীব আলো জ্বলে ওঠে। রে লিল ব্ল্যাক তার সেই মুহূর্তের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ‘ওই মুহূর্তটা ছিল অদম্য, অথচ অপার শান্তিতে ভরা; এমন অভিজ্ঞতা আগে কখনও হয়নি আমার।’ সেই এক মুহূর্তেই তার ভেতরে কৌতূহলের এক কোমল বীজ জন্ম নেয়, হৃদয়ের দরজা খুলে যায় এক নতুন জগতের দিকে, যেখানে সবকিছু ভিন্ন, অথচ আশ্চর্যরকম আপন।
আস্তে আস্তে তিনি ইসলামের পথে আরও গভীরভাবে আগ্রহী হয়ে উঠেন। বাহ্যিক জীবন নয়, বরং আধ্যাত্মিক আলোই হয়ে ওঠে তার জীবনের নতুন দিশারি। আর তখন থেকেই রে লিল ব্ল্যাক পরিচিত হন এক নতুন নামে—নূরে ইস্তেকবাল অর্থাৎ ‘ভবিষ্যতের আলো’। বর্তমানে তিনি এ নামেই পরিচিত।
রে লিল ব্ল্যাক বলেন, অতীত নয়, বরং আত্মিক পরিপূর্ণতাই এখন তার জীবনের মূল লক্ষ্য। এক সময়কার গ্ল্যামার-আবৃত জীবন থেকে বেরিয়ে এসে তিনি এখন খুঁজে পেয়েছেন এমন এক প্রশান্তির ছোঁয়া, যা কেবল হৃদয়ের গভীরতাকেই স্পর্শ করে নিঃশব্দে, কিন্তু চিরস্থায়ীভাবে।
যেভাবে ফিরলেন ইসলামের ছায়াতলে
কুয়ালালামপুরের সেই সফর যেন ছিল কাই আসাকুরার জীবনের এক নতুন ভোরের শুরু। এক পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে দীর্ঘ হৃদ্যতা আর গভীর কথোপকথনের মাঝে তার ভেতরে জন্ম নেয় এক আলোকিত জিজ্ঞাসা—আমি কে, কোথা থেকে এলাম, আর কোথায় ফিরব?
সেই বন্ধুর অনুপ্রেরণায় তিনি কেবল মসজিদের দেওয়াল ছুঁয়ে দেখেননি, ছুঁয়ে ফেলেছিলেন এক অদেখা জগতের নীরব প্রশান্তি। ২০২৪ সালের ৯ মার্চ, রমজানের পবিত্রতা যখন মালয়েশিয়াজুড়ে বিরাজমান, তখন ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পোশাকে সজ্জিত হয়ে তিনি উপস্থিত হন শ্রী সেন্দায়ানের ঐতিহাসিক মসজিদে ইফতারে অংশ নিতে।
সেদিনের সেই মুহূর্তগুলোর কিছু ছবি ও ভিডিও তিনি যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন, তা যেন মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে আগুনের মতো। উৎসাহ, কৌতূহল আর বিতর্ক সবকিছুরই ঝড় ওঠে।
জাপানে ফিরে আসার পর রে লিল ব্ল্যাকের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কে জানার তৃষ্ণা আরও গভীর হতে থাকে। পবিত্র আল-কুরআনের অনুবাদে ডুবে থাকা রাতগুলো, ইসলামি চিন্তাবিদদের কথা শোনার ব্যস্ততা এবং অনুশীলনকারী মুসলিমদের সঙ্গে হৃদয়ের স্তরে সংলাপ—সব মিলিয়ে যেন তিনি এক নবজীবনের সন্ধানে নিজেকে নিঃশব্দে গড়ে তুলছিলেন।
প্রকাশ্য ঘোষণা এবং দৃঢ় অঙ্গীকার
আর সেই অন্তরের পরিবর্তনের বহিঃপ্রকাশ ঘটে ২০২৪ সালের অক্টোবরের একদিন। টোকিওর এক ইসলামিক কমিউনিটি সেন্টারে পর্দাসম্মত পোশাক ও হিজাব পরে একটি টিকটক ভিডিও পোস্ট করেন তিনি। ভিডিওটি ছিল নীরব, কিন্তু তা যেন বজ্রের মতো আলোড়ন তোলে। তার অনুসারীরা হতবাক, মিডিয়া তৎপর, কেউ বাহবা দেয়, তো কেউ প্রশ্ন তোলে।
কিন্তু এইসব প্রতিক্রিয়ার মাঝেও নূরের মুখে এক প্রশান্তি দেখা যায়, ঠিক যেমন কেউ অবশেষে নিজের পথ খুঁজে পায় অনেক দূর হাঁটার পর। কারণ তার কাছে এই পরিবর্তন শুধুই পোশাকের নয়, এটি আত্মার এক নতুন পরিধানে আবৃত হওয়ার গল্প।
এক সাক্ষাৎকারে নূর বলেছিলেন, ‘আমি সেদিন প্রথমবারের মতো হিজাব পরেছিলাম। কারণ আমি মসজিদে যেতে চেয়েছিলাম, মুসলিমদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম।’ তিনি জানান, মালয়েশিয়া ভ্রমণের পর তার জীবনে এই পরিবর্তন আসে।
বর্তমানে নূর ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকে নিয়মিত ইসলামিক ভাবনায় ভরপুর কন্টেন্ট তৈরি করছেন। এক ভাইরাল ভিডিওতে তাকে দেখা যায় বোরকা পরা অবস্থায়, নির্লজ্জ আস্থা নিয়ে নিজের যাত্রার কথা বলছেন।
ভিডিওতে তিনি বলেন, কীভাবে কিছু মানুষ তাকে বলেছে তার পাপ কখনোই ক্ষমা হবে না। কিন্তু নূরের কণ্ঠে ছিল এক অনড় শান্তি, তিনি বলেন, ‘ইসলাম গ্রহণের পর আমি অনুভব করি, আমার অন্তর প্রশান্ত, আমি আল্লাহর আরও কাছাকাছি।’
রে লিল ব্ল্যাক রোজা রাখছেন বলেও ভিডিওতে জানান। সমালোচকদের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি জান্নাতে যাব কি না বা আমার পাপ ক্ষমার যোগ্য কি না, সেটা তোমাদের বিচার করার বিষয় নয়। আমার ও আল্লাহর মধ্যে আমারই নিয়ত যথেষ্ট, এ নিয়ে আপনার চিন্তা না করলেও চলবে।’
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC