আলেম-ওলামাদের মামলা প্রত্যাহার ও অবিলম্বে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণাসহ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ৯ দফার ঘোষণাপত্র দিয়েছে ওলামা-মাশায়েখ বাংলাদেশ। এছাড়া কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে মাওলানা সাদ ও সাদপন্থীদের কোন কার্যক্রম চালাতে দেয়া হবে না বলেও ঘোষণা করা হয়।
তাদের দাবি, মাওলানা সাদের অনুসারীরা আসন্ন বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সহিংসতা করার ষড়যন্ত্র করছে। ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আলেম-ওলামারা তাদের সব ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দিতেও প্রস্তুত আছে।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুর একটার দিকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত পূর্ব ঘোষিত ইসলামি মহাসম্মেলন থেকে এসব দাবি উপস্থাপন করেন শায়খুল হাদিস পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বেফাক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক। সকাল ৯টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ‘দাওয়াত ও তবলিগ, মাদারেসে কওমিয়া এবং দীনের হেফাজতের লক্ষ্যে’ এ মহাসম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে স্বঘোষিত আমির সাদ ও তার অনুসারীরা বিশৃঙ্খলা করার পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা কোনোভাবেই সেটি হতে দেব না। তাদের সমস্ত ষড়যন্ত্র যেকোনো মূল্যে আমরা ব্যর্থ করে দেব।
মহাসম্মেলনে ঘোষিত ৯টি দফা হলো-
১. কওমি শিক্ষাকে দারুল ওলুম দেলবন্দের আওতায় পরিচালনা করতে হবে। এবং তাবলিগ নিয়ে বিচ্ছিন্ন মহলের সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।
২. সাধারণ শিক্ষা সিলেবাসে ধর্মশিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৩. আলেমদের বিরুদ্ধে বিগত সরকারের যাবতীয় মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
৪. শাপলা চত্বরের গণহত্যায় জড়িত আসামিদের দেশে এনে শাস্তি নিশ্চিত এবং সারাদেশে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
৫. ২০১৮ সালে টঙ্গী ময়দানে সাদপন্থিদের নৃশংস আক্রমণের বিচার করতে হবে।
৬. সাদপন্থীরা নবী করিম সা. সহ সাহাবীদের সমালোচনা করে আসছে। সাদ তাবলিগের নীতিমালা উপেক্ষা করে আসছে। তাই দারুল উলুম দেলবন্দ সাদ সাহেবকে দেশে আসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কোনো অবস্থাতেই আসতে দেওয়া হবে না।
৭. আলেমপন্থিদের বিশ্ব ইজতেমাই সরকারঘোষিত দুই পর্বে করতে দিতে হবে। এর মধ্যে আগামী বিশ্ব ইজতেমা প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ২৭-২৮-২৯ জানুয়ারি, দ্বিতীয় পর্ব ৭-৮-৯ ফেব্রুয়ারি করার ঘোষণা করা হলো। এবিষয়ে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।
৮. কাকরাইল মসজিদ সাদপন্থিদের কোনো কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হবে না। কাকরাইল আজ থেকে কেবলমাত্র শুরায়ি নেজামে পরিচালিত হবে।
৯. অভিশপ্ত কাদিয়ানিদের অবিলম্বে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে।
এছাড়া মহাসম্মেলনে কাকরাইল মসজিদে সাদপন্থীদের কোনো কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হবে না বক্তারা জানান। এছাড়াও কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করার দাবি জানানো হয়। শেষে মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে মহাসম্মেলন শেষ হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন শাহ মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।
এর আগে সকাল নয়টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলন ঘিরে ভোর থেকেই লাখো আলেম-ওলামার জমায়েত হতে থাকেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। উদ্যান কানায় কানায় পূর্ণ হয়। এই সম্মেলন চলে দুপুর ১টা ১৭ মিনিট পর্যন্ত।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন খলিল আহমাদ কাসেমী হাটহাজারী, আল্লামা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর, আল্লামা আব্দুল রহমান হাফেজ্জী, আল্লামা নুরুল ইসলাম, আদিব সাহেব হুজুর, মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক, মাওলানা রশিদুর রহমান, আল্লামা শাইখ জিয়াউদ্দিন, আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান, আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস, ফরিদাবাদ, আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা আবু তাহের নদভী, মাওলানা আরশাদ রহমানি, মাওলানা সালাহউদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা মুস্তাক আহমদ, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা আনোয়ারুল করীম, মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।
সমাবেশে ঢাকা ছাড়াও সারাদেশের কওমি মাদরাসার হাজার হাজার আলেম যোগদান করেন। ফলে সকাল থেকে রাজধানীতে যানজট ছিল তীব্র। এখনো অনেক সড়কে গাড়ির জট কমেনি।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC