শনিবার ২৫ অক্টোবর, ২০২৫

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে হেফাজতে ইসলাম কুমিল্লা মহানগরের বিক্ষোভ সমাবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে হেফাজতে ইসলাম কুমিল্লা মহানগরের বিক্ষোভ সমাবেশ

কুমিল্লার টাউন হল ময়দানে হিন্দুত্ববাদী উগ্র সংগঠন ইস্কন কর্তৃক টঙ্গীর খতিব মুফতি মুহিবুল্লাহ মিয়াজীকে বারবার হুমকির পর গুম করে চরম নির্যাতন, গাজীপুরে শিশু আশা মনি ধর্ষণসহ উগ্ৰহিন্দু কর্তৃক সারাদেশে মুসলিম নারীদের পরিকল্পিত ধর্ষণ, বুয়েটের আত্মস্বীকৃত ধর্ষক শ্রীশান্ত রায়, চট্টগ্রামের অ্যাডভোকেট আলিফ হত্যাকাণ্ডসহ ইসকনের সকল অপকর্ম, খুন ও ধর্ষণের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করন এবং ইস্কনকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম, কুমিল্লা মহানগর শাখা।

শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) বাদ জুম’আ বিক্ষোভ মিছিলটি কুমিল্লা টাউন হল ময়দান থেকে বের হয়ে রাজগঞ্জ মোড় হয়ে মোগলটুলিসহ কেন্দ্রীয় ঈদগাহের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে পূবালী চত্বরে এসে শেষ হয়।

বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব প্রতিবাদ সমাবেশে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর হেফাজতের সভাপতি মুফতি শামসুল ইসলাম জিলানী এর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা মহানগর হেফাজতের সহ-সভাপতি হাঃ মাও ওয়ালীউল্লাহ, সহ-সভাপতি, মাওলানা তৈয়্যব,মহানগর সেক্রেটারী মাওলানা মনিরুল ইসলাম কাসেমী, বুড়িচং উপজেলার সভাপতি মাওলানা জহিরুল ইসলাম, যুগ্ম সেক্রেটারী মাওঃ আনিসুর রহমান আশরাফী, মুফতি ইয়াকুব, মাওলানা জামিল আশরাফী, মাওলানা মুফিজুল ইসলাম, মুফতী নাইমুল ইসলাম, মুফতী মোজাম্মেল হোসেন, মহানগর সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা সোলাইমান, মাওলানা আব্দুল কাদের জামাল, মাওলানা আমান উল্লাহ মুন্সী, মাওলানা খলীলুর রহমান কাসেমী, মুফতী ওমর ফারুক ও মাওলানা সাখাওয়াত রাহাত প্রমুখ।

এ সময় মহানগর হেফাজদের পক্ষ থেকে ৬ দফা দাবি পেশ করেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও কুমিল্লা মহানগর হেফাজতের সভাপতি মুফতি শামসুল ইসলাম জিলানী ।

দাবি গুলো হলো-

(১) রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র ও ইসকনকে বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশেও অনতিবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। ইসকনের সমস্ত কার্যক্রম সরকার বন্ধ করতে হবে।

(২) টঙ্গীর খতিব মুফতি মুহিবুল্লাহ মিয়াজীকে বারবার হুমকির পর হত্যার উদ্দেশ্যে গুম করে চরম নির্যাতনকারীদের অতি দ্রুত গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে।

(৩) গাজীপুরের শিশু আশা মনিরকে ধর্ষকনকারীদের দ্রুত গ্ৰেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে।

(৪) বুয়েটের আত্মশিক্ষিত ধর্ষক তৃষান্ত রায়ের ফাঁসি দিতে হবে ।

(৫) চট্টগ্রাম আদালতে শহীদ সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার কার্যক্রম শেষ করে অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে।

(৬) ইস্কনের বিরুদ্ধে মামলা নিতে অজুহাত প্রকাশকারী স্বৈরাচারের ধূসর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

ইসকনের উগ্রতার দায় সরকার কখনো এড়াতে পারে না ।যদি দাবিগুলো মেনে নেওয়ার বিষয়ে সরকার অতিদ্রুত বিবেচনায় না আনে তাহলে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি সহ দেশের যেকোনো পরিস্থিতি সৃষ্টিতে সরকারই এতে দায়ী থাকবে।

প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, হেফাজতে ইসলামসহ বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরামগন দীর্ঘদিন যাবত সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে আসছে, হিন্দুত্ববাদী উগ্র সংগঠন ইস্কন প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিভিন্নভাবে দেশবিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত হয়ে আছে। যদি এদেশে তাদের কার্যক্রমকে অতি দ্রুত বন্ধ করা না যায় তাহলে তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে ফেলতে পারে । হেফাজত সহ এদেশের শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরামগন গত ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার দেশদ্রোহী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে ইসকনের কর্মী-সমর্থকরা চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে সন্ত্রাসী আক্রমণ চালিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে প্রকাশ্য দিবালোকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। ভারতের উসকানি ও সরাসরি মদদেই এই অরাজকতা তৈরি করা হয়েছিল। তাই এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ইস্কনের কর্মী-সমর্থকদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে শহীদ আলিফ হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

বক্তারা আরও বলেন, মিম্বরে মুসল্লিদের সামনে ইস্কনের মুখোশ উন্মোচনের কারণে টঙ্গীর খতিব মুফতি মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজীকে বারবার হুমকি দেওয়ার পর হত্যার উদ্দেশ্যে গুম করে তার উপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। তার গুমের বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে পঞ্চগড়ে শিকল বেঁধে বিবস্ত্র অবস্থায় তাকে অচেতন করে ফেলে পালিয়ে যায় ইস্কন সন্ত্রাসীরা। দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে তাদেরকে অবশ্যই নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে আর নয়তো নবী প্রেমিক তাওহীদ জনতা রাজপথ দখল করতে বাধ্য হবে।

বক্তারা আরও বলেন গাজীপুরে মাদরাসা শিক্ষার্থী শিশু আশা মনিকে অপহরণ করে টানা তিনদিন ধর্ষণ করে উগ্ৰ ইস্কন সদস্যরা। বড় দুঃখ ও আফসোসের বিষয় হলো তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দিতে গেলেও মামলা নিতে গড়িমসি করছে প্রশাসন । ভিকটিমের পরিবারকে পূর্ববর্তী বক্তব্য প্রত্যাখানের জন্য হুমকি দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
বক্তারা আরও বলেন ইস্কনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে ইতিমধ্যে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদিআরব ও রাশিয়ায় রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরেও তাদেরকে কোনো কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হচ্ছে না।

রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডের দায়ে”ইসকনকে” নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে বক্তারা আরও বলেন, মুসলমানের রক্তখেকো ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসকগোষ্ঠী এদেশে ‘হিন্দু কার্ড’ খেলে পতিত স্বৈরাচার আওয়ামীলীগের পূণর্বাসনের মাধ্যমে নিজেদের আধিপত্যবাদ বিস্তার করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

আরও পড়ুন