
বিশ্বজুড়ে ক্যাথলিক চার্চের অভ্যন্তরে যৌন নির্যাতনের দীর্ঘস্থায়ী সংকট যখন গভীর আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, ঠিক তখনই ইতালির পরিস্থিতি নিয়ে সামনে এলো এক অত্যন্ত ভয়াবহ তথ্য।
দেশটির সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী সংগঠন ‘রেতে ল’আবুসো’ এই অভিযোগ করেছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ইতালিতে ২০০০ সালের পর থেকে ক্যাথলিক ধর্মযাজকদের হাতে প্রায় ৪ হাজার ৪০০ মানুষ যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) প্রকাশিত এই অনানুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান দীর্ঘদিনের গভীর সংকট মোকাবিলায় ইতালির বিশপদের ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি করেছে। এই খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা ফ্রান্সেসকো জানার্দি নিশ্চিত করেছেন যে, এই পরিসংখ্যান ভুক্তভোগীদের ব্যক্তিগত বিবৃতি, বিচার বিভাগীয় সূত্র এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত মামলার তথ্যের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়েছে।
রেতে ল’আবুসো যদিও নির্দিষ্ট করে জানায়নি যে এই নির্যাতনের ঘটনাগুলো কত বছরের পুরোনো, তবে তাদের নথিভুক্ত তথ্য মতে, তারা এখন পর্যন্ত ১ হাজার ২৫০টি সন্দেহভাজন নির্যাতনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। এর মধ্যে ১ হাজার ১০৬টি ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন সরাসরি পুরোহিতরা।
বহু দশক ধরে শিশু যৌন নির্যাতনের অভিযোগে বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক চার্চ কাঁপলেও, ইতালির স্থানীয় চার্চ নেতৃত্ব এই সংকট মোকাবিলায় তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি সংযমী অবস্থান নিয়েছে। ইতালির বিশপ সম্মেলন (সিইআই) এই প্রতিবেদন নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
চার্চের এই নীরবতা ও পদক্ষেপের অভাব নিয়ে গত সপ্তাহেই ভ্যাটিকানের শিশু সুরক্ষা কমিশন তাদের সমালোচনা করেছিল। কারণ দেশের মোট ২২৬টি ডায়োসিসের (চার্চের এলাকাভিত্তিক প্রশাসনিক বিভাগ) মধ্যে মাত্র ৮১টি কমিশনকে পাঠানো প্রশ্নপত্রের উত্তর দিয়েছিল।
ভ্যাটিকান কমিশনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতার অভাব এখনো ইতালির চার্চ ব্যবস্থার একটি বড় দুর্বলতা।
সংগঠনটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোট ৪ হাজার ৬২৫ জন ভুক্তভোগীর (যাদের তারা সারভাইভার বা উত্তরজীবী বলে উল্লেখ করে) মধ্যে ৪ হাজার ৩৯৫ জনই পুরোহিতদের হাতে নির্যাতিত। এদের মধ্যে ৪ হাজার ৪৫১ জনের বয়স ছিল ১৮ বছরের নিচে, এবং ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৪ হাজার ১০৮ জন ছিলেন পুরুষ।
তবে সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হলো, রেতে ল’আবুসোর তথ্য অনুযায়ী, ১ হাজার ১০৬ জন সন্দেহভাজন পুরোহিতের মধ্যে মাত্র ৭৬ জনের বিরুদ্ধে চার্চ আদালতে বিচার হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১৮ জনকে ধর্মযাজক পদ থেকে অব্যাহতি বা বহিষ্কার করা হয়েছে। গুরুতর বিষয় হলো, অভিযোগের পর ৫ জন অভিযুক্ত আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে রেতে ল’আবুসো।
এই সপ্তাহেই নতুন পোপ লিও প্রথমবারের মতো ধর্মযাজকদের হাতে যৌন নির্যাতনের শিকারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি চার্চের নবনিযুক্ত বিশপদের উদ্দেশে বলেন, “অসদাচরণের অভিযোগ গোপন রাখবেন না।” এই বক্তব্যের পরই ইতালির এই ভয়াবহ তথ্য সামনে আসায় চার্চের উপর চাপ আরও বাড়লো।









