
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক দুইবারের মেয়র ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মনিরুল হক সাক্কু অভিযোগ করেছেন, ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য তাকে শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে তিনবার তুলে নিয়ে চাপ দেওয়া হয়েছিল। এমনকি তাকে গুম করে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) এক গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাক্কু এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, “রাজধানী থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় একটি বাহিনী পক্ষ থেকে পাস করিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু আমি তাতে রাজি হইনি। আওয়ামী লীগের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদও আমাকে পাস দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে, আমি সেসমস্ত প্রস্তাব নাকচ করে দেই।”
সাক্ষাৎকারে সাক্কু আরও বলেন, “আমি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে দুইবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। কুমিল্লার মানুষ আমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসেন। কুমিল্লার মানুষের কারণেই আমি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ২০২২ সালের সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। আমি দলের হাই কমান্ডকে বলেছিলাম, আমাদের কুমিল্লার সিটটা বিএনপির সিট। এখানে বিএনপির ভোটব্যাংক। অন্যকোনো দল এখানে কোনোদিন জিততে পারবে না। কিন্তু দল আমার কথা আমলে না নিয়ে উল্টো বহিষ্কার করল।”
২০২২ সালে বহিষ্কার হওয়ার পর থেকে দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন জানিয়ে সাক্কু বলেন, “তিন বছর অতিবাহিত হলো আমি আমার কাজ বন্ধ করিনি। যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন দলের জন্য কাজ করে যাবো। বিএনপি আমার অস্তিত্ব। দল আমাকে দূরে সরিয়ে রাখলেও আমি বিএনপি থেকে পিছপা হবো না। আমি মারা গেলে যেন বিএনপির পতাকায় মুড়িয়ে আমায় দাফন করা হয়।”
সামনের নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে সাক্কু বলেন, “যে নির্বাচন আগে দেওয়া হবে আমি দলের কাছ থেকে সেটির জন্য মনোনয়ন চাইব। জাতীয় নির্বাচন কিংবা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। যেটা আগে হবে সেটিতেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। আশা করছি দল বহিষ্কারের আদেশ প্রত্যাহার করে আমাকে মনোনয়ন দেবে।”
বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে সাক্কু জানান, “আমি প্রতিটি ওয়ার্ডে ইফতারসহ বিভিন্ন প্রোগ্রাম করছি। দলের ঊর্ধ্বতন নেতাদের সাথে আমার যোগাযোগ আছে। আমাকে তিন বছর হলো বহিষ্কার করা হলো, কিন্তু এই তিন বছরে আমার তিনজন নেতাকর্মীও আমাকে ত্যাগ করেনি। আমি আমার নেতাকর্মীদের সংগঠিত রেখে যাচ্ছি। সরকার পতনের আগেকার দলের প্রতিটি কর্মসূচি পালন করেছি। মহাসচিব আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেছিলেন কাজ করে যাও। আমি একটা কর্মসূচিতেও বসে থাকিনি।”
সাক্কু বলেন, “আমাকে অন্য দলে নেওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু আমি জিয়াউর রহমানের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হইনি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আমাকে ডেকে বলেছিলেন, তুমি জাতীয় পার্টিতে যোগ দাও তোমার স্ত্রীকে এমপি বানিয়ে দেবো। কিন্তু আমি তাকে সরাসরি বলেছিলাম, আমি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ থেকে সরে যেতে পারবো না।”
২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক সংসদ সদস্য বাহাউদ্দীন বাহারের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য একটি বাহিনীর সদস্যরা তাকে বাসা থেকে তিনবার তুলে নিয়ে যায় বলেও অভিযোগ করেন সাক্কু। তিনি বলেন, “একবার নিয়ে গিয়েছিল সাবেক মন্ত্রী হাছান মাহমুদের কাছে। হাছান মাহমুদ আমাকে পাস করিয়ে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। বাহিনীটি আমাকে গুম করে ফেলার হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু তাদের লোভে কিংবা ভয়ে পড়িনি। আমি শহীদ জিয়ার আদর্শের সৈনিক। যতদিন বাঁচব, জিয়াউর রহমানের আদর্শ ধারণ করে দলের জন্য কাজ করে যাবো। দল আমাকে অনেক কিছুই দিয়েছে। আমি দলের প্রতি সবসময়ই কৃতজ্ঞ।”
উল্লেখ্য, মনিরুল হক সাক্কু বিএনপি থেকে অব্যাহতি নিয়ে ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নাগরিক কমিটির ব্যানারে নির্বাচন করে প্রথমবারের মতো মেয়র হন। ২০১৭ সালে তিনি বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে আবারও মেয়র নির্বাচিত হন। ২০২২ সালের ১৫ জুন দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। এজন্য দল তাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে।
বহিষ্কার হওয়ার আগে মনিরুল হক সাক্কু কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তৃতীয় সিটি করপোরেশনে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের কাছে ৩৪৯ ভোটে হেরে যান সাক্কু। ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মারা যান মেয়র আরফানুল হক রিফাত। এতে মেয়র পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।
২০২৪ সালের ৯ মার্চ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হন মনিরুল হক সাক্কু। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তাহসিন বাহার সূচনার কাছে ২২ হাজার ভোটে হেরেছিলেন সাক্কু। অবশ্য সেই নির্বাচনে কেন্দ্র দখল, জাল ভোট, ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে না দেওয়াসহ নানান অভিযোগ ওঠেছিল তাহসিন বাহার সূচনার বিরুদ্ধে।