
গতকাল সোমবার দুপুরে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৭ জনে দাঁড়িয়েছে। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র সায়ানও। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান তার বাবা, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মোহাম্মদ ইউসুফ।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি শুধু এটুকু বলতে পারছেন, “আমার ছেলে ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট, পুরো কলেজে ফার্স্ট হয়। আমার ছেলে সবচেয়ে স্মার্ট…” এই কথাগুলো বলার পরই তিনি ডুকরে কেঁদে ওঠেন।
মোহাম্মদ ইউসুফ মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের ক্যাম্পাসে শিক্ষকতা করেন। তার ছেলে সায়ান পড়ত দিয়াবাড়ি ক্যাম্পাসে। গতকাল বিকেলে তিনি খবর পান যে তার ছেলে দগ্ধ হয়ে প্রথমে বাংলাদেশ মেডিকেল এবং পরে বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে ভর্তি। সায়ানের শরীরের ৯৫ শতাংশই পুড়ে গিয়েছিল। রাত ৩টা ৫০ মিনিটে সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমায়।
রাত গড়িয়ে সকাল হলেও বাবার কান্না থামেনি। ক্ষোভ আর বেদনায় তিনি বলেন, “এটা কোনো দেশ হলো বলেন? লোকালয়ের ওপর দিয়ে কেন একটি ট্রেনিং বিমান চলবে? বলেন। এ দেশে কোনো মানুষের নিরাপত্তা নেই। এ কারণে আমি আর এ দেশে থাকব না। আমার পুরো ফ্যামিলি এ দেশ থেকে চলে যাব।”
ছেলের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এই বাবা আবারও কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, “আমার ছেলে ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট, পুরো কলেজে ফার্স্ট হয়। আমার ছেলে সবচেয়ে স্মার্ট… এদেশের পলিটিশিয়ানরা এদেশটাকে পলিউট করে ফেলছে। আমরা থাকব না এই দেশে।”
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, এই শিক্ষক দম্পতির দুই সন্তানের মধ্যে সায়ান ছিল বড়। তাদের ছোট মেয়েও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজেই পড়ে, তবে সে নিরাপদে আছে।
উল্লেখ্য, গতকাল দুপুর ১টার কিছু পর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনার পরপরই বিমান ও স্কুল ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। যে ভবনে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়, সেখানে বহু স্কুল শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল, যাদের অধিকাংশই হতাহত হয়েছে।
দুর্ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান শুরু করে। উত্তরাসহ আশেপাশের ৮টি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং হতাহতদের উদ্ধার কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে বিজিবি ও সেনাবাহিনীও উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয়। বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে আহতদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, এই মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ২৭ জনে দাঁড়িয়েছে।