আনসার ব্যাটালিয়নে বিদ্রোহ সংঘটন ও প্ররোচনাসহ অন্যান্য অপরাধের দায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে ‘আনসার ব্যাটালিয়ন আইন, ২০২৩’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
আজ সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনের খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এর আগে গত বছরের মার্চে খসড়াটি নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
মাহবুব হোসেন বলেন, প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, আনসার ব্যাটালিয়নদের অভ্যন্তরীণ অপরাধের বিচার হবে দু’টি আদালতে। এর মধ্যে একটি হবে ‘সংক্ষিপ্ত আনসার ব্যাটালিয়ন আদালত’। এর প্রধান হবেন একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালক। আরেকটি হবে ‘বিশেষ আনসার ব্যাটালিয়ন আদালত’। এর প্রধান হবে আনসারের মহাপরিচারক। এর মধ্যে বিদ্রোহ সংঘটন, তাতে প্ররোচনা, বিদ্রোহের কারণ সৃষ্টি, ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ও যোগদান করা ইত্যাদি গুরুতর অপরাধের বিচার হবে এই বিশেষ আনসার আদালতে। এই ধরনের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড।
তিনি বলেন, এছাড়াও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে শুরু করে অন্যূন পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের অপরাধগুলোর বিচার হবে এই বিশেষ আদালতে। এসব আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ রাখা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করারও সুযোগ আছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরো বলেন, প্রস্তাবিত এই আইনে বিদ্রোহের একটি সংজ্ঞাও দেওয়া হয়েছে।
মাহবুব হোসেন বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ (ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ) নীতিমালা, ২০২৩’র অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা সরকারি প্রতিষ্ঠানেও ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পাবেন। বর্তমানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এই সুযোগ থাকলেও সেটি নীতিমালা অনুযায়ী হচ্ছে না, যার যার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হচ্ছে। এখন বেসরকারি খাতকেও একই নীতিমালার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বৈঠকে ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে ইন্টারর্নশিপ (ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ), নীতিমালা, ২০২৩-এর খসড়া উপস্থাপন করা হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিষয়টি এই নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে নীতিমালাটি সংশোধন করা হবে।
তিনি বলেন, প্রত্যেক বছর ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ দেবে প্রতিষ্ঠানগুলো। কতজনকে দেবেন সেটি তারা ঠিক করবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদা অনুযায়ী কোন বিষয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী নেবে সেটি ঠিক করা হবে। উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই কাজটি হবে। তিন থেকে ছয় মাস মেয়াদে হবে এই ইন্টার্নশিপ। এ জন্য ভাতাও দেওয়া হবে। কত ভাতা হবে সেটি পরে ঠিক হবে।
মাহবুব হোসেন বলেন, দেশে নতুন করে আরও দুটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জ’ হবে নারায়ণগঞ্জে। আর ‘সাতক্ষীরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ হবে সাতক্ষীরায়। এই দুটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য পৃথক দুটি আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে শিক্ষা বিষয়ে আরও কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক (চাকরি শর্তাদি নির্ধারণ) বিধিমালা ২০১৩ সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ২০১৩ সালে জাতীয়করণ (সরকারি) কৃত ২৬ হাজার ১৯৩টি বিদ্যালয়ের শিক্ষককে যোগ্যতা অর্জনের শর্ত পূরণের সময় বাড়ানো হয়েছে। নতুন সময় অনুযায়ী ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত শর্ত পূরণের সুযোগ পাবেন ওই সব বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।
এ ছাড়া জাতীয় শিক্ষক দিবসের পরিবর্তে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদ্যাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা। দিবসটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দিবস উদ্যাপন সংক্রান্ত পরিপত্রের ‘খ’ তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে ‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি আইন, ২০১৩’-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ভুয়া সনদে বিদেশ যাওয়া চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো সহায়তা করবে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশ দেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অনেকে ভুয়া সনদ নিয়ে বিভিন্ন কাজে প্রবাসে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ এসেছে। চিকিৎসক ও প্রকৌশলীর ভুয়া সনদ নিয়েও যাচ্ছেন। কীভাবে তারা এই ভুয়া সনদ নেয়, কীভাবে ভুয়া সনদে যায়, কারা তাদের সহযোগিতা করে এবং যারা যায় তারা নিজেরাও কীভাবে এই কাজটি করে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীক নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো সহায়তা করবে।
বৈঠকে ‘বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন (সংশোধন) ২০২৩’- এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ‘প্লাস্টিক শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০২৩’ এবং ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি (সংশোধন) আইন, ২০২৩’র খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।