আজ সাবেক ডেপুটি স্পিকার এবং কুমিল্লা ৭ (চান্দিনা) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব অধ্যাপক আলী আশরাফের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০২১ সালের এই দিনে তিনি ৭৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন ঘটেছিল।
অধ্যাপক আলী আশরাফ ছিলেন বাংলাদেশের রাজনীতির একজন প্রবীণ, অভিজ্ঞ এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তিনি শুধু একজন সংসদ সদস্যই ছিলেন না, তিনি ছিলেন জনমানুষের নেতা, যিনি তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন দেশ ও দশের কল্যাণে। কুমিল্লা-৭ আসন থেকে তিনি পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন, যা তাঁর জনপ্রিয়তা ও মানুষের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসার প্রমাণ। তাঁর দীর্ঘ এবং বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তিনি মহান জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদেও অত্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রারম্ভিক জীবন ও রাজনৈতিক হাতেখড়ি
আলী আশরাফ ১৯৬২ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় বাংলাদেশ ছাত্র লীগে যোগদান করে রাজনীতিতে পা রাখেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।
১৯৭০ সালের পাকিস্থান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে পরাজিত হয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক ছিলেন।
১৯৭৩ সালের প্রথম বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের তিনি তৎকালীন কুমিল্লা-১১ আসন থেকে আওয়ামী লীগে প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১২ জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৬ আসন থেকে আওয়ামী লীগে প্রার্থী হিসেবে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
তিনি ২০০৮ সালের নবম, ২০১৪ সালের দশম এবং ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৭ আসন থেকে আওয়ামী লীগে প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০০১ সালে সাবেক স্পিকার হুময়ুর রশীদ মৃত্যুর পর সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ডেপুটি স্পিকার থেকে স্পিকারের দায়িত্বে গ্রহনের পর তিনি ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জনসেবায় নিবেদিতপ্রাণ
অধ্যাপক আলী আশরাফ তাঁর নির্বাচনী এলাকার মানুষের জন্য ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। তিনি শুধু একজন রাজনীতিবিদই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন সমাজসেবক, যিনি তাঁর এলাকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছেন। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় চান্দিনায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, যা এলাকার শিক্ষার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া, গ্রামীণ অবকাঠামো, যেমন রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। এলাকার মানুষের কাছে তিনি একজন জনদরদী এবং আপোসহীন নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং তাদের সমস্যার সমাধানে সচেষ্ট ছিলেন।
রাজনৈতিক দর্শন ও উত্তরাধিকার
অধ্যাপক আলী আশরাফ ছিলেন একজন বিচক্ষণ এবং দূরদর্শী রাজনীতিবিদ। তিনি সব সময় গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক দর্শন ছিল মানুষের কল্যাণে নিবেদিত। তিনি বিশ্বাস করতেন, প্রকৃত রাজনীতি হলো জনসেবা। তাঁর কর্মময় জীবন এবং তাঁর নীতি-আদর্শ আগামী প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। তাঁর মৃত্যু চান্দিনা তথা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি করেছে, যা সহসা পূরণ হওয়ার নয়।
চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে জাতি এই প্রবীণ রাজনীতিক, জননেতা এবং সাবেক ডেপুটি স্পিকারকে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সাথে স্মরণ করছে। তাঁর স্মৃতি অমর হোক।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC