
দেশজুড়ে অসহনীয় গরমের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। এর মধ্যেই আবহাওয়া অধিদপ্তর আগামী তিন দিনের জন্য নতুন করে তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছে। শুক্রবার (৯ মে) দুপুর ২টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। শুধু তাই নয়, দিন ও রাতের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদদের বুলেটিন অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। এর পাশাপাশি রাতের তাপমাত্রাও সামান্য বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা জনজীবনে আরও অস্বস্তি ডেকে আনবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের ৪৫টি জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। উত্তরাঞ্চলের রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারি, রাজারহাট যেমন এই তালিকায় ছিল, তেমনি মধ্য ও পূর্বাঞ্চলের ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালীও বাদ যায়নি। দক্ষিণাঞ্চল ও উপকূলীয় চট্টগ্রামের পাশাপাশি বান্দরবান, বরিশাল, পটুয়াখালীও গরমের তীব্রতায় ভুগছে। বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনাতেও একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
গতকাল চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা ছিল ৩৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানী ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট, দেশের অধিকাংশ জেলায় মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ এখন বিদ্যমান।
সাধারণত চৈত্র ও বৈশাখের শুরুতে তাপপ্রবাহের আধিক্য দেখা গেলেও, এবার বৈশাখের শেষ প্রান্তে এসে এই তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা এর জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকেই দায়ী করছেন। তাদের মতে, এই ধরনের অস্বাভাবিক আবহাওয়ার পরিবর্তন জলবায়ু পরিবর্তনেরই ফল।
এই পরিস্থিতিতে জনসাধারণকে বেশ কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। দিনের বেলায়, বিশেষ করে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সরাসরি সূর্যের আলো এড়িয়ে চলার কথা বলা হয়েছে। একইসঙ্গে হালকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে জল ও ইলেকট্রোলাইট মিশ্রিত পানীয় গ্রহণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়ার এবং হিটস্ট্রোকের কোনো লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস আরও জানিয়েছে, যদি তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি পৌঁছায়, তবে সেই পরিস্থিতিকে তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে গণ্য করা হবে। এই অবস্থায় জনস্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে এবং কৃষি উৎপাদনও ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।