
বিনোদন ডেস্ক
আজ ১৩ নভেম্বর, বাংলাদেশের নন্দিত কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন। ১৯৪৮ সালের এই দিনে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বাংলা সাহিত্যের এই জনপ্রিয় রূপকার। আজ তাঁর ৭৮তম জন্মদিন উদযাপিত হচ্ছে।
গল্পকার বা নির্মাতা হিসেবে তিনি এক নামে পরিচিত হলেও, অনেকেই হয়তো ভুলে যান যে তিনি দীর্ঘকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের একজন অধ্যাপক ছিলেন। লেখক ও শিক্ষক—এই দুই পেশার সংমিশ্রণই তাঁর সৃষ্টিশীলতায় এনেছিল এক স্বতন্ত্রতা, যা তাঁকে শিক্ষকতা থেকে কলম হাতে সবাইকে ছাড়িয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
হুমায়ূন আহমেদ শিক্ষাজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন শাস্ত্রে বিএসসি (সম্মান) ও এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পলিমার রসায়নে পিএইচডি অর্জন করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দিয়েছিলেন।
শিক্ষকতা করার পাশাপাশি তিনি লেখালেখি চালিয়ে যান এবং দ্রুতই জনপ্রিয় একজন লেখক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর লেখা বইগুলো অধ্যাপনা অবস্থায়ই পাঠকমহলে তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়ায় অনেকেই তখন তাঁর কাছে নিয়মিত লেখালেখির দাবি জানাতেন। অবশেষে পূর্ণকালীন লেখক হওয়ার জন্য ১৯৯০ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার ১৬ বছরের মাথায় অধ্যাপনা থেকে স্বেচ্ছায় বিরতি নেন। অনেকের মতেই, তাঁর এই পেশা পরিবর্তন ছিল সময়ের দাবি।
হুমায়ূন আহমেদের গদ্যের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো শব্দের সরলতা। তাঁর গল্পের বাক্যগুলো হতো ছোট এবং সাবলীল। তিনি মনের ভাব এমনভাবে প্রকাশ করতেন যা সচরাচর দেখা যায় না। তাঁর বাক্যের গাঁথুনি সমাজের সব শ্রেণির পাঠকের মন জয় করেছিল, যা এখন মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
তাঁর জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ ছিল, লেখাগুলো একাধারে কৌতূহলোদ্দীপক, যুক্তিনির্ভর এবং পাঠকের আবেগকে গভীর স্পর্শ করত। এই কারণেই হুমায়ূন আহমেদ তাঁর লেখার মাধ্যমে বাঙালির কল্পনাশক্তিতে এক চিরকালীন আবেদন সৃষ্টি করে গেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাকতার সুবাদে তিনি দীর্ঘদিন ধরে জ্ঞান-বিজ্ঞানকে নেড়ে দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন, যার স্পষ্ট প্রতিফলন দেখা যায় তাঁর লেখনীতে। হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সায়েন্স ফিকশন-এর অন্যতম পথিকৃৎ। বিজ্ঞানের শিক্ষক না হলে হয়তো এই ধারায় তাঁর অবাধ বিচরণ সম্ভব হতো না।
তাঁর লেখায় প্রায়শই বাস্তব এবং অবিশ্বাস্য ঘটনার এক চমৎকার মিশ্রণ দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘দেবী’-তে রানুর অলৌকিক অনুভূতিকে শেষ পর্যন্ত ফ্রয়েডের থিওরি বা সাইকিক প্রজেকশনের মাধ্যমে ব্যাখ্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এই উপন্যাসে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, যুক্তি-তর্কের বাইরেও একটি রহস্যময় জগৎ আছে, যা সবক্ষেত্রে শুধু বিজ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না—এর জন্য প্রয়োজন কল্পনার বিস্তার।
প্রেম-ভালোবাসা, বিরহ, ছোটগল্প কিংবা বিজ্ঞানভিত্তিক ধারার গল্পের পাশাপাশি সমাজের নানা কুসংস্কার নিয়েও কলম ধরেছেন হুমায়ূন আহমেদ। নন্দিত কথাসাহিত্যিকের বাবা ছিলেন ফয়েজুর রহমান এবং মা আয়েশা ফয়েজ।
২০১২ সালের ১৯ জুলাই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৬৩ বছর বয়সে নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে মারা যান বাংলা সাহিত্যের এই কিংবদন্তী।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC