জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজারো শিক্ষার্থী একটি সুন্দর ও নিরাপদ পরিবেশে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। এই ক্যাম্পাস যেন তাদের দ্বিতীয় বাড়ি।
এই ক্যাম্পাসের পরিবহন ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন চলাচলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে স্বল্পদূরত্বে যাতায়াতের জন্য উপযোগী বাহন হিসেবে অটোরিকশা চালুর দাবি জানিয়ে আসছে। এই দাবি কোনোভাবেই অযৌক্তিক নয়; বরং শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন বাস্তবতার একটি সুস্পষ্ট প্রতিফলন।
সাম্প্রতিক সময়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশ শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণ ও সুসংগঠিতভাবে এই দাবির পক্ষে একটি আন্দোলন শুরু হয়। তারা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানায় যেন বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যন্তরে সীমিত সংখ্যক হলেও ইঞ্জিনচালিত অটোরিকশা চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়, যা একদিকে যেমন অসুস্থ, প্রতিবন্ধী কিংবা দূরবর্তী হলে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক হবে, তেমনি নিরাপত্তার দিক থেকেও অধিকতর কার্যকর হতে পারে।
এই দাবি ঘিরে একাধিকবার আলোচনা, স্মারকলিপি প্রদান এবং প্রশাসনের সাথে বসার চেষ্টাও করেছে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের পেছনে কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা বা অস্থিরতা সৃষ্টির উদ্দেশ্য ছিল না। বরং ছিল সম্পূর্ণ শিক্ষার্থীবান্ধব, বাস্তবমুখী ও গঠনমূলক চিন্তাভাবনার প্রতিফলন।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে, এই ন্যায্য দাবিকে কেন্দ্র করে কিছু কুচক্রী মহল শুরু করে এক গভীর ষড়যন্ত্র। তারা বিভিন্নভাবে এই আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। শিক্ষার্থীদের সরল ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর প্রচার চালানো হয়।
কোথাও কোথাও আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা চলে। এমনকি কিছু অসাধু চক্রও সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে; শিক্ষার্থীদের ক্ষোভকে ভুল পথে পরিচালিত করতে।
এই পুরো ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে সবচেয়ে দুঃখজনক দিক হলো, প্রশাসনের একাংশ কিংবা প্রভাবশালী কিছু পক্ষ এই ষড়যন্ত্রের গন্ধ থাকা সত্ত্বেও নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করেছে।
শিক্ষার্থীদের বক্তব্য শোনার বদলে তাদের ওপর নজরদারি, অহেতুক চাপ সৃষ্টি বা আন্দোলন দমনের ভাষা ব্যবহার করা হয় কিছু ক্ষেত্রে, যা একটি গণতান্ত্রিক ও মুক্তচিন্তার চর্চা করা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
একটি বিশ্ববিদ্যালয় কেবল পাঠদান কিংবা গবেষণার জায়গা নয়, বরং এখানে শিক্ষার্থীরা বিকশিত হয় মত প্রকাশের অধিকার, নাগরিক চেতনা ও সামাজিক দায়িত্ববোধের মাধ্যমে।
সেখানে এমন একটি যুক্তিসংগত ও শিক্ষার্থীস্বার্থ সংশ্লিষ্ট দাবিকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা শুধু একটি আন্দোলনকে নয়, পুরো বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।
এই প্রেক্ষাপটে এখন সময় এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের আন্তরিক চিন্তার। শিক্ষার্থীদের প্রকৃত চাহিদা ও বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে যেকোনো দাবি কিংবা আন্দোলনকে শ্রবণযোগ্য করে তোলা উচিত।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেও সতর্ক থাকতে হবে যেন কোনো অশুভ শক্তি আন্দোলনকে ব্যবহার করে তাদের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে না পারে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় তার প্রগতিশীল ইতিহাস, সাংস্কৃতিক পরম্পরা ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার জন্য পরিচিত। এই প্রতিষ্ঠান যেন কোনো ষড়যন্ত্র বা কুচক্রের বলি না হয়, সেটাই সকলের কাম্য।
অটোরিকশা চালুর মতো একটি ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ দাবিকে ঘিরে গড়ে ওঠা এই আন্দোলন যেন সংলাপ ও সমাধানের পথে এগিয়ে যায়, সেটিই হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক আস্থার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC