গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় (উন্নয়ন ও অধিশাখা) উপসচিবের স্বাক্ষর জালিয়াতি ঘটনায় দায়েরকৃত প্রতারণার মামলায় কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক নিশাত আহমেদ খানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
রোববার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. রশিদুল আলম এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে ওই মামলায় গত ৪ অক্টোবর সকালে ধানমন্ডি থানা পুলিশ রাজধানীর বনশ্রীর বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলার বাদী কুমিল্লা নগরীর রাজাপাড়া এলাকার বাসিন্দা লন্ডন প্রবাসী মিনহাজুর রহমান। অপর দিকে নিশাত একই নগরীর ঝাউতলা এলাকার বাসিন্দা।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা নগরীর ঝাউতলা এলাকার বাসিন্দা কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক নিশাত আহমেদ খান ২০২০ সালের ৫ জুলাই গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় (উন্নয়ন ও অধিশাখা) উপসচিব এস.এম নজরুল ইসলামের স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে তার অনুপস্থিতিতে অন্যকে হাজির করে ধানমন্ডির একটি ফ্লাটের ভূয়া হেবা দলিলের কাগজপত্র সম্পন্ন করেন। পরবতীতে তথ্য গোপন করে ওই নেত্রী তার নিজের নামে ফ্লাটের নামজদারী করে ভাড়াটিয়াকে বের করে দিয়ে বাসা দখলে নেন। তিনি দেশে ফিরে ফ্লাটের ভূমি কর দিতে গিয়ে বিষয়টি জানতে পেরে জালিয়াতির বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণাললের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেন। এতে তদন্তে স্বাক্ষর জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগটি প্রমানিত হয়। পরে চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর প্রবাসী মিনহাজুর রহমান বাদী হয়ে আওয়ামী লীগ নেত্রী নিশাত আহমেদ খানসহ তার ৫ সহযোগীর বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় প্রতারণার মামলা দায়ের করেন।
মামলার বাদী মিনহাজুর রহমান আরও বলেন, এর আগেও গত বছরের নারায়নগঞ্জের রুপগঞ্জ থানায় সাড়ে ৩০ শতাংশ জমির ভূয়া হেবা দলিলের মামলায় নিশাত আহমেদ গ্রেফতার হয়ে গত বছরের ১৭ জুলাই কারাগারে যান। নিশাত খানের বিরুদ্ধে প্রতারণা, কাবিন ও জন্ম নিবন্ধন জালিয়াতি, চুরি ও অর্থ আত্মসাতসহ বিভিন্ন অভিযোগে ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, কুমিল্লা, চাপাইনবাবগঞ্জ ও নীলফামারি জেলায় বর্তমানে ১১টি মামলা চলমান আছে।
বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা খান বলেন, এ মামলার অভিযোগ গুরুতর। সরকারি কর্মকর্তার স্বাক্ষর ও আগের স্মারক নম্বর দেখিয়ে প্রতারণা করেন তিনি। তাই প্রতারক চক্রের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামির (নিশাত) ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আসামি পক্ষে আইনজীবি ছিলেন এডভোকেট সাইদুর রহমান মানিক।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. খোকন মিয়া বলেন, ‘একজন উপসচিবের স্বাক্ষর ও সরকারি দপ্তরের নথি জালিয়াতির চক্রের মাধ্যমে আসামি প্রতারণা করেছেন। তিনি একা নন। এসব চক্রের কারণে অনেকেই প্রতারিত হচ্ছে। তাই মামলার প্রধান আসামি নিশাত খানকে জিজ্ঞাসাবাদে হয়তো আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে।’
এ বিষয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নিশাতের বিষয়টি সাংগঠনিকভাবে আলোচনা করা হবে। দোষী প্রমাণিত হলে দলের গঠনতন্ত্র অনুসারে দল ব্যবস্থা নেবে।