বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে। চলতি বছরে ডেঙ্গুতে এ পর্যন্ত ৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় ১৭ হাজার ৮৩১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
অনেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দেয় না। আবার যখন উপসর্গ দেখা দেয়, তখন সেগুলোকে অন্য অসুখ ভেবে ভুল করতে পারেন। সাধারণত ডেঙ্গু মশা কামড়ানোর চার থেকে ১০ দিন পরে লক্ষণ প্রকাশ শুরু হয়। ডেঙ্গু জ্বরের কারণে শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ড্রিগ্রি ফারেনহাইট হতে পারে। এ ছাড়া আরও যেসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে-
ডেঙ্গুর লক্ষণ
১. ডেঙ্গুর অন্যতম লক্ষণ শরীর ব্যথা। এটি স্বাভাবিক ব্যথার চেয়ে তীব্র হয়ে থাকে। মাথাব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথা হতে পারে। এ সময় চামড়ায় লালচে দাগ বা র্যাশ থাকতে পারে।
২. শরীর ঠাণ্ডা হচ্ছে মনে হতে পারে। ক্ষুধা কমে যাওয়া, শরীর ম্যাজম্যাজ করার লক্ষণও দেখা দিতে পারে।
৩. মারাত্মক ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে তীব্র পেট ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া, রক্তবমি, মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ, ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ, শ্বাসকার্য কঠিন বা দ্রুত হওয়া, শরীর ঠাণ্ডা অনুভব বা ঘাম হওয়া, দ্রুত নাড়ি স্পন্দন এবং ঘুমঘুম ভাব, চেতনা হারানো।
৪. ডেঙ্গুর শক সিনড্রোম থেকে মানবদেহে পানিশূন্যতা তৈরি হয়। সঙ্গে সঙ্গে পাল্স রেট অনেকটা বেড়ে যায় এবং রক্তচাপ খুব কমে যায়। শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। শ্বাসপ্রশ্বাস খুব দ্রুত চলে। রোগী অস্থির হয়ে ওঠেন। তখন সময় ক্ষেপণ না করে হাসপাতালে ভর্তি করানো উচিত।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষ এক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেন। কিছু ক্ষেত্রে জীবন হুমকির মধ্যে পড়ে। যাকে বলা হয় মারাত্মক ডেঙ্গু, ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম।
ডেঙ্গুর আক্রান্ত রোগীর শরীরের রক্তনালীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে যায়। ফলে শক, অভ্যন্তরীণ রক্তপাত, শরীরের অঙ্গগুলো অকার্যকর এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, মশার কামড় রোধ করা এবং মশার বংশ বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা ডেঙ্গু জ্বর রোধ করার প্রধান উপায়। এ ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আরও কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
১. ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী মশা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে, তবে তারা রাতেও কামড়াতে পারে। এজন্য রাতেও মশারি টানাতে হবে।
২. প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরুন। যেমন-ডেঙ্গু আক্রান্ত এলাকায় গেলে একটি লম্বা হাতা শার্ট, লম্বা প্যান্ট, মোজা এবং জুতা পরুন।
৩. ঘরের দরজা, জানালায় ও ভেন্টিলেটরে মশানিরোধক জাল ব্যবহার করুন।
৪. মশার বংশ বিস্তার ধ্বংশ করুন। যে মশাগুলো ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে, তারা সাধারণত বাড়িতে এবং আশপাশে বাস করে। টায়ার, ফুলের টব ও ডাবের খোসার মধ্যে ডেঙ্গু লার্ভা পাওয়া যায়। তাই এগুলো অব্যহৃত অবস্থায় রাখা যাবে না।
৫. সপ্তাহে অন্তত একবার যে কোনো পাত্রে জমে থাকা পানি, যেমন-গাছের টব, পশুর খাবারের পাত্র এবং ফুলদানি পরিষ্কার করতে হবে।
চিকিৎসকের শরণাপন্ন কখন হবেন
এখন যেহেতু ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি, তাই কারো জ্বর হলে ডেঙ্গুর লক্ষণের অপেক্ষা না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা জরুরি। কারণ ডেঙ্গুর ধরন বারবার পরিবর্তন হচ্ছে। ফলে রোগী খুব দ্রুত শকে চলে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময় দেখা গেছে কেউ কেউ আক্রান্তের দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিন মৃত্যুবরণ করেছেন।
ডেঙ্গুর চিকিৎসা
ডেঙ্গু জ্বরের মূলত তেমন কোনো চিকিৎসা নেই। লক্ষণ কেন্দ্রিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে পরিস্থিতি জটিল হলে কোনোভাবেই বাসায় চিকিৎসা সম্ভব নয়, তাই হাসপাতালে রোগীকে ভর্তি করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই প্যারাসিটামল ব্যতিত এসপিরিন বা ব্যথানাশক এবং জ্বরনাশক বড়ি বা সিরাপ খাওয়ানো যাবে না। ডেঙ্গু রোগীকে স্বাভাবিক খাবারের সাথে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার, যেমন-পানি, সুপ, দুধ বা ফলের রস খাওয়াতে হবে। রোগীকে পূর্ণ বিশ্রাম রাখতে হবে।