
পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল ইতিকাফ। ২০ রমজান সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া এই ইতিকাফ সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। অর্থাৎ, মহল্লার একজন আদায় করলে সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। তবে কেউ আদায় না করলে সবাই গুনাহগার হবেন।
কোরআনুল কারিমে ইতিকাফের গুরুত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘যখন আমি কাবা ঘরকে মানুষের মিলনক্ষেত্র ও আশ্রয়স্থল করেছিলাম। আর আমি বলেছিলাম, তোমরা ইব্রাহিমের দাঁড়ানোর জায়গাকেই নামাজের জায়গারূপে গ্রহণ কর। আর আমি ইব্রাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করি; তোমরা আমার ঘরকে পবিত্র রাখবে, তাদের জন্য যারা এটা প্রদক্ষিণ করবে, এখানে বসে ইতিকাফ করবে এবং এখানে রুকু ও সিজদা করবে।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১২৫)।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজরতের পর জীবদ্দশায় রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ কখনো ছাড়েননি। (সহিহ বুখারি : ২০২৬)
তিনি আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসের শেষ দশদিন ইতিকাফ করবে, তাকে দুটি হজ ও দুটি ওমরা পালন করার সওয়াব দান করা হবে।’ (শুয়াবুল ঈমান, হাদিস : ৩৬৮০)
ইতিকাফের প্রস্তুতি:
মানসিক প্রস্তুতি: ইতিকাফকারীকে প্রথমেই ইতিকাফের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে। কেননা মসজিদে অবস্থানের কারণে তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় যে সামান্য পরিবর্তন আসবে তা মেনে নিতে হবে। বিশেষত ইতিকাফের সময়টুকু ইবাদতে পরিণত করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে।
নিয়তের বিশুদ্ধতা: ইতিকাফ পূর্ব থেকেই তার নিয়ত শুদ্ধ করে নেবে। ইতিকাফের পারিপার্শ্বিক কোনো কারণও যদি থেকে থাকে, তবে তা মন থেকে মুছে ফেলে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে অগ্রাধিকার দেবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা শুধু সে আমলই গ্রহণ করেন, যা একনিষ্ঠ হয়ে শুধু তাঁর জন্য করা হয় এবং যার মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করা হয়।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩১৪০)
ইতিকাফের সময়গুলো শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের কাজেই ব্যয় হওয়া প্রয়োজন। তাই ইতিকাফের আগে ব্যক্তিগত ও সাংসারিক ব্যস্ততাগুলো শেষ করা উচিত। যেন ইতিকাফ শুরু করার পর অন্যমনষ্ক হতে না হয়।
প্রয়োজনীয় আসবাব সংগ্রহ: ইতিকাফের সময় ব্যক্তি মসজিদে অবস্থান করে। তাই সেখানে অবস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় আসবাবগুলো আগে থেকে প্রস্তুত রাখা প্রয়োজন। যেমন ঘুমের জন্য বিছানা-বালিশ, প্রয়োজনীয় কাপড়, টয়লেট টিস্যু, সাবান, পানির পাত্র, প্লেট-গ্লাস, মূল্যবান জিনিস সংরক্ষণের জন্য তালা দেওয়া যায়—এমন ব্যাগ বা লাগেজ ইত্যাদি।
ইতিককাফের ফজিলত:
- দুটি হজ ও দুটি ওমরা পালনের সওয়াব পাওয়া যায়।
- লাইলাতুল কদর পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
ইতিকাফের এই দিনগুলোতে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকার মাধ্যমে আমরা নিজেদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে পারি এবং মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি।