হজ পালন করতে সৌদি আরবে গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়েন পাকিস্তানিরা—সৌদি সরকারের তরফ থেকে এমন অভিযোগের পর কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে পাকিস্তান। এখন থেকে হজযাত্রীর বেশে যাতে কেউ ভিক্ষা করতে না পারে সেজন্য হজে যাওয়ার আগে ‘ভিক্ষা করব না’ মুচলেকা নিচ্ছে দেশটির সরকার।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সিয়াসাতের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানি ভিক্ষুকদের ধরতে অভিযান চালিয়েছে সৌদি আরব। এরপর দেশটি সতর্ক বার্তা দিয়েছে, ওমরাহ ও হজ ভিসায় রিয়াদে পাকিস্তানি ভিক্ষুক ভরে গেছে।
ভিক্ষাবৃত্তির উদ্দেশ্যে এমন ভিসায় কোনো পাকিস্তানি যেন প্রবেশ করতে না পারে- পাকিস্তানের ধর্মমন্ত্রণালয়কে তার কড়া বার্তা দেয় সৌদি সরকার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সৌদির ডেপুটি-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছে, তারা ইতোমধ্যে ৪ হাজার ৩০০ ভিক্ষুককে ‘এক্সিট কন্ট্রোল’ লিস্টে পাঠিয়ে দিয়েছে।
এআরআই নিউজের রিপোর্টে বলা হয়েছে, হজযাত্রীর বেশে সৌদি আরবে যেন কোনো ভিক্ষুক যেতে না পারে- এজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে পাকিস্তান। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, হজযাত্রীদের এখন সৌদি যাওয়ার আগে মুচলেকা দিতে হবে। অঙ্গীকার করতে হবে- তারা সৌদিতে যাওয়ার পর ভিক্ষাবৃত্তি করবে না।
এছাড়া হজযাত্রীদের গ্রুপ আকারে সৌদিতে ভ্রমণ করতে হবে। এর মাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তিতে সহজেই কেউ জড়িয়ে পড়বে না বলে আশা পাকিস্তানের। যেসব ট্রাভেল এজেন্সি তীর্থযাত্রীদের সৌদি পাঠাবে তারাও একই ধরনের মুচলেকা নিবে। এটি করতে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়া যেসব এজেন্সি এমন ভিক্ষুককে পাঠায় তাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান।
এর আগেও সৌদি আরবে পাকিস্তানি ভিক্ষুক পাঠানো নিয়ে কথা উঠেছিল। তখন বিষয়টি নিয়ে পাকিস্তানে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত নাওয়াফ বিন সাইদ আহমেদ আল-মালকির সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি। বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, সৌদি আরবে ভিক্ষুক পাঠানোর জন্য দায়ী মাফিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই নেওয়ার্কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সিকে (এফআইএ) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
গত বছর পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব জিশান খানজাদাও বিষয়টি স্বীকার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তানি ভিক্ষুকেরা ওমরাহর আড়ালে মধ্যপ্রাচ্যে যাতায়াত করছে। বেশির ভাগ মানুষই ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরবে যান এবং তারপর ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়েন।
পাকিস্তানের প্রবাসী কল্যাণসংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব আরশাদ মাহমুদ গত বছর বলেছিলেন, উপসাগরীয় বেশ কয়েকটি দেশ প্রবাসী পাকিস্তানিদের আচরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
পাকিস্তানের প্রবাসী পাকিস্তানি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের মতে, বিভিন্ন দেশে আটক হওয়া ভিক্ষুকদের মধ্যে ৯০ শতাংশই পাকিস্তানের।