
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত পরিচিতি লাভ এবং অনলাইন থেকে অর্থ উপার্জনের অদম্য নেশায় নিজের সন্তানদের প্রতি অমানবিক আচরণের অভিযোগে অবশেষে আইনি জালে জড়ালেন সাভারের ‘ক্রিম আপা’ খ্যাত শারমিন শিলা।
বুধবার (৯ এপ্রিল) রাতে আশুলিয়া থানায় তার বিরুদ্ধে শিশু আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সাভার উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা এই মামলার বাদী।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, বিউটিশিয়ান শারমিন শিলা ওরফে ক্রিম আপা নিজের তৈরি প্রসাধনী বিক্রির উদ্দেশ্যে এবং ভিডিওগুলোতে প্রচুর ভিউ পাওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে তার সন্তানদের ব্যবহার করে আসছিলেন। গত ৩০ মার্চ তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করা একটি ভিডিও ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওতে দেখা যায়, শিলা তার ছোট্ট মেয়েকে জোর করে মুখ চেপে ধরে কেক জাতীয় খাবার খাওয়াতে বাধ্য করছেন।
শুধু তাই নয়, এজাহারে আরও অভিযোগ করা হয়েছে যে শারমিন শিলা প্রায়শই তার ছেলেমেয়েকে জোরপূর্বক ক্যামেরার সামনে এনে তাদের চুল কাটা বা রং করা, কানে ভারী দুল পরানো, মুখে কুলকুচি করানো এবং তাদের প্রতি অপমানজনক গালিগালাজ, এমনকি থাপ্পড় ও শারীরিক কষ্ট দেওয়ার মতো নিষ্ঠুর আচরণ করে ভিডিও তৈরি করতেন। অভিযোগপত্রে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ভাইরাল হওয়ার মোহে মত্ত শিলা একজন মায়ের মতো আচরণ না করে তার সন্তানদের উপর প্রতিনিয়ত আঘাত, উৎপীড়ন ও অবহেলা করে আসছেন।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন এই বিষয়ে নিশ্চিত করে জানান, শারমিন শিলার বিরুদ্ধে শিশু আইনের ৭০ ধারায় মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। সাভার উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কাজী ইসরাত জামান বাদী হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত শারমিন শিলাকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, সামাজিক মাধ্যমে নিজের পণ্যের প্রচারের পাশাপাশি বিভিন্ন বিতর্কিত ভিডিও তৈরি করে পরিচিতি লাভ করেছিলেন শারমিন শিলা। তার ভিডিওগুলোতে প্রায়শই দেখা যেত, তিনি তার দেড় বছর বয়সী কন্যাশিশুর চুলে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করছেন, তার ছোট কানে ভারী দুল পরাচ্ছেন, তাকে ধমকাচ্ছেন, খাবার কেড়ে নিচ্ছেন এবং এমনকি মাঝেমধ্যে তাকে মারধরও করছেন।
ভিডিওগুলোতে শিশুটির চোখেমুখে স্পষ্ট ভয় ও আতঙ্কের ছাপ দেখা গেলেও শিলা তার এই ধরনের আচরণকে ‘ভালোবাসা’ বলে দাবি করতেন। এছাড়াও, তিনি মাঝেমধ্যে তার ১২ বছর বয়সী ছেলেকেও ক্যামেরার সামনে হাজির করতেন। এই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় ওঠে, যার ফলশ্রুতিতে অবশেষে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হলো।