
দেশের বেশিরভাগ মানুষ আসন্ন নির্বাচনের আগে বিভিন্ন খাতে জরুরি সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছেন। একটি সাম্প্রতিক জাতীয় জরিপে দেখা গেছে, আইন-শৃঙ্খলা, অর্থনীতি, শিক্ষা, দুর্নীতি দমন এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কারকে তারা সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।
সোমবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁও জাতীয় আর্কাইভ মিলনায়তনে ‘ডিআইজিডি পালস সার্ভে’-এর গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং ভয়েস ফর রিফর্ম যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন বিআইজিডি’র গবেষণা ফেলো সৈয়দা সেলিনা আজিজ। তিনি জানান, জরিপে অংশ নেওয়া ৫ হাজার ৪৮৯ জন নাগরিকের মধ্যে ৫১% ‘সম্পূর্ণ সংস্কার শেষে নির্বাচন’ চান। ১৭% মনে করেন, কিছু জরুরি সংস্কারের পর নির্বাচন হওয়া উচিত। অন্যদিকে, ১৪% সংস্কার ছাড়াই সরাসরি নির্বাচনের পক্ষে।
সৈয়দা সেলিনা আজিজ আরও জানান, জরিপে দেখা গেছে, জনগণ সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন:
- আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়ন।
- রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অসহিষ্ণুতা কমানো।
- নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার।
- নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ ও বেকারত্ব হ্রাস।
- শিক্ষা ও অর্থনৈতিক সংস্কার।
- দুর্নীতি দমন।
- সাংবিধানিক ও পুলিশ সংস্কারকেও জরুরি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্যানেল আলোচনায় বিআইজিডি’র সিনিয়র গবেষণা ফেলো ড. মিরাজ এম হাসান বলেন, “আগে মানুষ অর্থনীতি ও রাজনীতিকে বেশি গুরুত্ব দিত। এখন নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় হলে তারা আইন-শৃঙ্খলাসহ অন্যান্য বিষয়ে মনোযোগ দিচ্ছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, বর্তমান সময়ে ‘ভয়ের সংস্কৃতি’ নেই এবং নারীর অধিকার রক্ষায় জনসমর্থন বেড়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. আসিফ শাহান বলেন, “আগে ধারণা ছিল অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হলেই দেশ খারাপ হয়। কিন্তু এবার অর্থনীতি তুলনামূলক ভালো থাকলেও মানুষ দেশকে ভালো মনে করছে না।” তিনি আরও বলেন, “মানুষ নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই সংস্কার চায়। কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আস্থা কমে গেছে, কারণ নির্বাচনের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পরে বাস্তবায়িত হয় না।”
জরিপে আরও উঠে এসেছে যে, ২৫% মানুষ নির্বাচন পেছাতে চান। বাকিরা দ্রুত নির্বাচন চান। জনগণের প্রত্যাশা শুধু নির্বাচন নয়, বরং নির্বাচনের আগে কার্যকর সংস্কার বাস্তবায়নই তাদের আস্থার মূল শর্ত।