মার্চ ১১, ২০২৫

মঙ্গলবার ১১ মার্চ, ২০২৫

‘তারল্য সংকটে মুখথুবড়ে ব্যাংক ও প্রতিকার’

লেখক/ছবি কোলাজ/গ্রাফিক্স: রাইজিং কুমিল্লা

ব্যাংক একটি আর্থিক মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান। গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা জমা নিয়ে সেই জমাকৃত অর্থ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ ও গ্রাহকদের সুদে ঋণদান ব্যাংকের প্রধান কাজ। ব্যাংকিং পরিভাষায় তারল্য সংকট হলো গ্রাহক তার প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যাংকের নিকট চাওয়ার পর তা যদি ব্যাংক পরিশোধ করতে অক্ষম হয়। অর্থাৎ গ্রাহক ব্যাংকে তার জমাকৃত অর্থ ব্যাংক থেকে উত্তোলন করতে আগ্রহী হয় কিন্তু ব্যাংক সে অর্থ গ্রাহককে পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয় সেই টার্ম বা অবস্থাকেই ব্যাংকের তারল্য সংকট বলে অভিহিত করা হয়।

দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার অগ্রগতিতে প্রধান অন্তরায় হলো তারল্য সংকট ও অব্যবস্থাপনা।

বর্তমানে বাংলাদেশের নানা বাণিজ্যিক ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়ে ব্যাংক পরিচালনা করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। দৈনন্দিন গ্রাহকদের অর্থ পরিশোধ করতে গিয়ে ব্যাংকগুলো হিমশিম খাচ্ছে এবং ব্যাংকের নিজস্ব তহবিলে রাখা অর্থ ফুরিয়ে আসছে। সেজন্য দেশের নামকরা বহু ব্যাংক তারল্য সংকটের গ্যাঁড়াকলে পড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শরণাপন্ন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, দেশের ৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের চলতি হিসেবের তারল্য ঘাটতি ১৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

যেখানে বাণিজ্যিক ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্যই হলো ঋণদানের মাধ্যমে সুদ গ্রহণ করা সেখানে ৯টি ব্যাংক তাদের তারল্যের যোগান দিতে ব্যর্থ। অর্থাৎ এই ৯টি ব্যাংক তার গ্রাহকদের জমাকৃত অর্থ গ্রাহক চাওয়ামাত্র পরিশোধ করতে পারছে না। গ্রাহকেরা এই ব্যাংকগুলোর এরকম রূঢ় আচরণে অতিষ্ঠ কারণ তারা তাদের দরকারি অর্থ ঠিকমত ব্যাংক থেকে উত্তোলন করতে পারছে না।

ব্যবসায়ীরা তাদের টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করতে না পারার ফলে ব্যবসায়ে চরম দূরাবস্থা দেখা দিয়েছে। সবমেলিয়ে তারল্য সংকটে ব্যাংকগুলোর বর্তমান পরিস্থিতি বেশ শোচনীয় এবং তাদের গ্রাহকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফুটে উঠেছে।

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের তারল্য সংকট কাটাতে কল মানি রেট টার্মটি ব্যবহার করছে। সেক্ষেত্রে আন্তঃব্যাংক লেনদেনের মধ্যে রেট হারও প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের পলিসি রেট বৃদ্ধি করার ফলে তারল্য সংকটে প্রভাব ফেলছে।

তবে বর্তমান সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার অধীনে থাকা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট লাঘব করতে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তন্মধ্যে অন্যতম হলো যেসব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা ভালো সেসব ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে ঋণদান করবে সেক্ষেত্রে ঋণ পরিশোধের গ্যারান্টি বা নিশ্চয়তা দিবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংক।

তাছাড়া ঋণের পরিমাণ নির্ধারণেও প্রধান ভূমিকা রাখবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এরকম যুগান্তকারী পদক্ষেপের কারণে আশা করা যায় আলোচিত ৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের তারল্য সংকটের মাত্রা শীঘ্রই কমবে।

সেক্ষেত্রে এই ৯টি ব্যাংকের উচিত যেসব কারণে তারল্য সংকট বৃদ্ধি পায় সেগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। যেমন–

১. ঋণ খেলাপি রোধে বিশেষ নজর দেওয়া।

২. অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তারল্য অনুপাত, চলতি সম্পদ অনুপাত, নিট লাভ, ইনভেন্টরি টার্নওভার ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।

৩. ঋণদানের ক্ষেত্রে গ্রাহক থেকে রাখা প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্টস পুঙ্খানুপুঙ্খ সত্যতা নিশ্চিত করা।

৪. রাজনৈতিক চাপে পড়ে ঋণদান বন্ধ করা।

৫. গ্রাহকদের জমাকৃত অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুসারে একটি নির্দিষ্ট অংশ তারল্য হিসেবে রাখা।

৬. কোথাও বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে ঐ প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে দেউলিয়া হতে পারে কিনা সেটা প্রতিষ্ঠানের সকল প্রকার কাগজপত্র পর্যবেক্ষণ করে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।

৭. বিদেশে অর্থ পাচার রোধ করা।

৮. সঠিক রিজার্ভ ব্যবস্থা প্রণয়ন করা। সর্বোপরি, গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করা এবং আস্থা অর্জনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কার্যাবলি সম্পাদন করা। তাহলেই তারল্য সংকট নামক অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো।

সাইদুল হাসান

লেখক: শিক্ষার্থী, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।