
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সংঘবদ্ধ ডাকাত দল অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ১৫টি গরু ও ট্রাকসহ প্রায় ৪৮ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় রোববার (১৭ নভেম্বর) দিবাগত রাতে ভুক্তভোগী গরু ব্যবসায়ী মুহাম্মদ আবদুল্লাহ তাওসীফ বাদী হয়ে চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চৌদ্দগ্রাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. গুলজার আলম।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১০-১২ বছর ধরে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার গরু ব্যবসায়ী মুহাম্মদ আবদুল্লাহ তাওসীফের ক্রয়-বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন রাজশাহীর গোদাগাড়ী এলাকার মো. সেলিম মিয়া। গত শনিবার (১৬ নভেম্বর) কুষ্টিয়া জেলার বাইলপাড়া হাট থেকে ২৮ লাখ ২৮ হাজার টাকা মূল্যে ১৫টি গরু ক্রয় করেন সেলিম।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রাজশাহীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার ঠাকুরমারা গ্রামের চালক মো. সেলিমের ট্রাকে (ঢাকা মেট্রো-ট-২০-৫১৯৮) গরুগুলো বোঝাই করে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া বিজিবি ক্যাম্প এলাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া হয়।
রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে ট্রাকটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার সোনাকাটিয়া এলাকায় পৌঁছালে ঘটনার সূত্রপাত হয়।
মহাসড়কে অবস্থানরত ৯-১০ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল লেজার লাইট মেরে ট্রাকটিকে থামার সংকেত দেয়। ডিবি পুলিশ মনে করে চালক মো. সেলিম ট্রাকটি থামান। ডাকাত দল ট্রাকে মাদকদ্রব্য আছে দাবি করে চালক, হেলপার ও প্রতিনিধি সেলিমকে অতর্কিতভাবে কিল-ঘুষি মারতে শুরু করে। এরপর চক্রটি তিনজনকে জোরপূর্বক একটি হাইয়েস গাড়িতে তুলে নেয়। অস্ত্রের মুখে তাদের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গামছা দিয়ে হাত-পা এবং স্কচটেপ দিয়ে মুখ বেঁধে ফেলা হয়। ডাকাত দলের দুই সদস্য গরু বোঝাই ট্রাকটি চালিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। এদিকে হাইয়েস গাড়িতে থাকা চক্রটি ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। চালক ও হেলপারসহ তিনজনকে গাড়িতে করে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে রোববার ভোররাতে লালমাই এলাকার সড়কের পাশের একটি ঝোপে ফেলে পালিয়ে যায় ডাকাতরা।
সকালে প্রতিনিধি মো. সেলিম মিয়া বিষয়টি ব্যবসায়ী তাওসীফের চাচাতো ভাই ইমতিয়াজ মাহমুদকে জানান এবং পরবর্তীতে চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশকে অবগত করেন।
মামলার তথ্যমতে, সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রটি সর্বমোট ৪৮ লাখ ৪৫ হাজার ৩০ টাকার মালামাল লুণ্ঠন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে, ২৮ লাখ ২৮ হাজার টাকা মূল্যের ১৫টি গরু, ২০ লাখ টাকা মূল্যের ট্রাক ও ভুক্তভোগী তিনজনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ডাকাত চক্রের সদস্যদের বয়স ২৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। তাদের শনাক্তকারী কিছু বৈশিষ্ট্য হলো, প্রত্যেকে ডিবি পুলিশের আদলে জ্যাকেট, জিন্স, ট্রাউজার ও খাকি রঙের প্যান্ট পরিহিত ছিল, দলের দুইজনের হাতে দুইটি পিস্তল এবং একজনের হাতে একটি হ্যান্ডকাফ ছিল এবং সদস্যরা প্রত্যেকেই কুমিল্লার আঞ্চলিক ভাষায় কথাবার্তা বলছিল।
চৌদ্দগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, “গরু বোঝাই ট্রাক ছিনতাইয়ের ঘটনায় ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ তাওসীফ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৯-১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। সংঘবদ্ধ এই ডাকাত চক্রকে গ্রেফতার করতে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।”








