
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ড.ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অফিসে অনিয়মিত এবং তেমন কোন কাজ ছাড়াই বসে বসে প্রতি মাসে বেতন পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র জানায়, ড.ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের গবেষক ভর্তির অনুমোদন না পাওয়ায় বিষয়টি ২০২২ সালে জানাজানি হলে এর পর থেকে তেমন কোন কাজ নেই এই ইন্সিটিউটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, ইন্সিটিউটে সর্বমোট সাত জন কর্মকর্তা ও একজন কম্পিউটার অপারেটর এবং একজন এমএলএস এস কর্মরত আছেন।
সাত জন কর্মকর্তার মধ্যে আছেন অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার খন্দকার গোলাম মোস্তফা, প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার ড.প্রসন্নজিৎ সরকার, সাবেক উপাচার্য আবদুল জলিলের মেয়ে রুমানা ফেরদৌসী জলীল, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রফিউল আজম খানের স্ত্রী ডেপুটি রেজিস্ট্রার সিরাজুম মুনিরা, সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার আবু সায়েম, সিনিয়র রিসার্চ অফিসার ও মুখতার ইলালীর বোন মেহজাবিন ইলাহী এবং রংপুর বিভাগের জিয়া পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও রিসার্চ অফিসার ড. মো. রোকনুজ্জামান।
জানা গেছে, ২০০৯ সালের ৩ ডিসেম্বর দশম সিন্ডিকেট সভার নবম সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ড. ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ইনস্টিটিউট থেকে এমফিল, পিএইচডি ডিগ্রি দিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এরপর ২০১১ সালের ৩ নভেম্বর ২০তম সিন্ডিকেট সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১২ সালের ৭ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে এমফিল, পিএইচডিতে ভর্তি করানো হয়।
গবেষণার জন্য অনুমোদন না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল জলিল মিয়া নিজের মেয়ে রুমানা ফেরদৌসী জলীলকে নিয়োগ দেয়ার জন্য ইউজিসির অনুমোদন ছাড়াই এই ইন্সিটিউটে গবেষক ভর্তির সিদ্ধান্ত নেন বলে কথিত আছে এবং তার আমলেই এই ভর্তি শুরু হয়।
এরপর ২০২২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ২০৫ জন গবেষক ভর্তি হন। তখন এই ইন্সটিটিউটে ভর্তির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে কার্যক্রম স্থবির হয়ে যায়, ২০২২ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এ ইন্সটিটিউটে কর্মরত প্রায় সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী এখন বসে বসেই বেতন পাচ্ছেন বলে কয়েকজন কর্মকর্তা অভিযোগ করেন।
কাজ না থাকায় অফিসেও নিয়মিত দেখা যায় না এসকল কর্মকর্তাকে। এর মধ্যে রিসার্চ অফিসার ড. মো. রোকনুজ্জামানের গবেষণা কার্যক্রমে তেমন না থাকলেও সক্রিয় রয়েছেন বিএনপির রাজনীতিতে।
কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্ট ও সাম্প্রতিক সময়ের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অমান্য করে এভাবে প্রকাশ্যে রাজনীতিতে জড়ানোর পরেও প্রশাসন থেকে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় ভবিষ্যৎ এখানকার কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে রাজনীতিতে জড়াবে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, এই ইনস্টিটিউটে দুই একজন বাদে কেউই নিয়মিত অফিস করেন না, এছাড়া তারা গবেষণায়ও মনোযোগী না। বেশিরভাগই ব্যক্তিগত কাজে সময় দেন। অন্য দপ্তরে যেখানে লোকবল সংকট সেখানে গত তিন বছর ধরে কোন কার্যক্রম ছাড়াই এভাবে এত কর্মকর্তাকে বসিয়ে বেতন দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এ কর্মকর্তা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রবিবার অফিস শুরুর পর বেলা সাড়ে নয়টায় গিয়ে একজন কর্মকর্তা ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায়নি। বিকেলে গিয়ে একই চিত্র দেখা যায়। পরের দিন সোমবার দুপুর ১২ টায় গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি।
কিছুক্ষণ পর রিসার্চ অফিসার ড. মো. রোকনুজ্জামান অফিসে এসে সাংবাদিকদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। এমন একটি অডিও ক্লিপ প্রতিবেদকের হাতে আছে। যেখানে তিনি সাংবাদিককে বলতে শোনা যায় তুমি কে? কোন সাংবাদিক, কোন মিডিয়ার সাংবাদিক ইত্যাদি নানান প্রশ্ন করতে দেখা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এই অফিসারদের গবেষণা কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে গিয়ে দেখা যায়, কোন কর্মকর্তারই কোন গবেষণা নেই। গবেষণা বিষয়ক ওয়েবসাইট রিসার্চ গেইটে খুঁজে মাত্র ড.প্রসন্নজিৎ সরকার ও সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার আবু সায়েম এর দুই তিনটি গবেষণা সংক্রান্ত আর্টিকেল পাওয়া যায়, বাকিদের কোন গবেষণা খুঁজে পাওয়া যায় নি।
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড.মো. শওকাত আলী বলেন, রিসার্চ পাবলিকেশন ছাড়া কীভাবে এই সব পদে তারা নিয়োগ পেয়েছে সেটা আমারও প্রশ্ন। যাইহোক তারা যে নিয়মিত অফিস করে না সেটা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এখনই রেজিস্ট্রার কে বলে দিচ্ছি।