
গরমের তীব্রতা বাড়ছে, আর এই সময় পুরুষদের তুলনায় নারীরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে বেশি থাকেন বলে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক গবেষণায়। শুধু বাংলাদেশ নয়, আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনেও এই তথ্য জানানো হয়েছে।
তাপ সহ্য করার ক্ষমতা, শারীরিক গঠন, জৈবিক প্রক্রিয়া, সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং হরমোনজনিত বিভিন্ন কারণে নারীদের এই ঝুঁকি বেশি থাকে।
ঘাম কম, বিপদ বেশি: জার্নাল অব অ্যাপ্লাইড ফিজিওলজিতে প্রকাশিত একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা অনুযায়ী, পুরুষদের তুলনায় নারীদের শরীরের তাপমাত্রা সামান্য বাড়লেই ঘামতে শুরু করে। তবে অবাক করার বিষয় হলো, সামগ্রিকভাবে তাদের ঘাম উৎপাদনের পরিমাণ পুরুষদের চেয়ে কম। যেহেতু ঘাম শরীরের তাপমাত্রা কমানোর প্রধান প্রক্রিয়া, তাই গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় এই পার্থক্য নারীদের জন্য একটি বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে। ফলে তাপপ্রবাহের সময় নারীদের শরীর অতিরিক্ত তাপ সহজে বের করতে পারে না, যা তাদের তাপজনিত চাপ বা হিট স্ট্রেসের ঝুঁকিতে ফেলে দেয় অনেক বেশি।
পুরুষের শরীর দ্রুত শীতল হয়: এক্সপেরিমেন্টাল ফিজিওলজির আরেকটি গবেষণা এই বিষয়টিকে আরও জোরালোভাবে সমর্থন করে।
গবেষণাটিতে দেখা গেছে, গরম আবহাওয়ায় ব্যায়াম করার সময় পুরুষদের শরীরে বাষ্পীয় শীতলতার হার নারীদের চেয়ে বেশি। এর সহজ অর্থ হলো, পুরুষদের ঘাম তুলনামূলকভাবে দ্রুত বাষ্প হয়ে যায়, যার ফলে তাদের শরীর খুব সহজেই ঠান্ডা হতে পারে। বিপরীতে, নারীদের শরীর এই প্রক্রিয়ায় পিছিয়ে থাকে।
ছোট শরীর, বেশি তাপ: শুধু ঘাম নয়, শরীরের আকার এবং গঠনও গরম সহ্য করার ক্ষমতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
টেম্পারেচার নামক একটি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা বলছে, ছোট আকারের শরীরের অধিকারীরা, বিশেষ করে নারীরা, তাদের শরীরে তুলনামূলকভাবে বেশি তাপ ধরে রাখেন। এই কারণে, গরমের সময় তারা তাপজনিত চাপ আরও বেশি অনুভব করেন। গরম পরিবেশে নারীদের শরীরকে ঠান্ডা রাখা তাই একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়, বিশেষত যখন তারা শারীরিক পরিশ্রম করেন।
শারীরবৃত্তীয় জটিলতা: শারীরিক গঠনের পাশাপাশি নারীদের কিছু শারীরবৃত্তীয় জটিলতাও রয়েছে যা গরমকালে তাদের ঝুঁকির মাত্রা বাড়ায়। মেডকেয়ার মেডিক্যাল সেন্টার মিরডিফ সিটির প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সোহা আলহৌবি এই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘নারীদের শরীর থেকে বাষ্পীয় তাপ নির্গমনের হার তুলনামূলকভাবে কম। ঘাম ঝরানোর মাধ্যমে শরীরকে ঠান্ডা করার ক্ষেত্রে নারীরা ততটা সক্ষম নন এবং তাদের শরীরও তেমনভাবে সহযোগিতা করে না। তাদের শরীরে ঘর্মগ্রন্থির সংখ্যাও পুরুষদের তুলনায় কম থাকে এবং তারা সাধারণত পরিশ্রমের সময় কম ঘামেন।’