কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) প্রশাসনিক ভবনের সামনে ২০১৬ সালে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে গত সোমবার রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে ‘বিজয় ২৪’ নামকরণ করা হয়েছে। তবে কে বা কারা এগুলো করেছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
গত সোমবার রাতে ও বুধবার সকালে দুই দিনের প্রচেষ্টায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলেন দুর্বৃত্তরা। ভাস্কর্যটি ২০১৬ সালের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আলী আশরাফ নির্মাণ করেন। যার ভাস্কর ছিলেন মৃনাল সেন। এটি নির্মাণ করতে ৩৫ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয় বলে জানা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর স্থানীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করেন। মিছিলের শুরুতে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে থাকা কাচের তৈরী বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করেন।
পরে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি ড্রিল মেশিন ও হাতুড়ি দিয়ে ভাঙার চেষ্টা করেন। সে সময় ভাস্কর্যটির গলায় জুতার মালা ঝুলিয়ে রাখেন তারা। এছাড়াও প্রশাসনিক ভবনের দেয়ালে আঁকা ‘কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবা না’ লেখা সম্বলিত চিত্র ফলকে কাঁদাও নিক্ষেপ করা হয়।
পরে বিক্ষুব্ধ বিএনপির নেতা-কর্মী ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম কাঁদা ও স্প্রে দিয়ে মুছে সেখানে ‘বিজয় ২৪’ নামকরণ করেন। পরে বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-অর্থ সম্পাদক নাদিম আহমেদও একটি স্প্রে দিয়ে নোটিশ বোর্ডে থাকা বঙ্গবন্ধুর নামটি মুছে ফেলেন।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুরের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আহ্বায়ক মামুন ও সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান শুভ’র সাথে যোগাযোগ করা হয়।তারা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা এ কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত নয়। তবে কে বা কারা এই ভাঙচুর চালিয়েছে তারা কিছুই জানেন না।
এদিকে দুইদিন ধরে ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার বিষয়ে কিছু জানেননা বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী (রানা)। তিনি বলেন, ‘দেশের এই পরিস্থিতিতে সকল পক্ষকে শান্ত থাকার অনুরোধ করছি। জাতীয় সম্পদের ক্ষতি ঠেকাতে শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানাই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরও বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য ভাঙচুরের বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের খোলার দুইদিন পার হয়ে গেলেও উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনকে ক্যাম্পাসে আসতে দেখা যায়নি। শেখ পরিবারের সদস্য দাবি করা উপাচার্য ড. আবদুল মঈনের মন্তব্য জানতে দুইদিন ধরে কল দিয়েও পাওয়া যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুরের বিষয়ে নিন্দা জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
ফাহমিদা করিম নামের এক শিক্ষার্থী মন্তব্য করেন, ”বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য থাকবে কি থাকবেনা তার সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীরা নিবে। ছাত্রদল ভাঙার কে?”
এর আগে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বেলতলী বিশ্বরোড সংলগ্ন গেইটের ভিত্তিপ্রস্তরে থাকা বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপি সরকারের মন্ত্রীদের নামফলকের একাংশ মুছে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। পরের বছর ক্যাম্পাসে খালেদা জিয়ার স্মৃতি সম্বলিত প্রতিষ্ঠাকালীন ভিত্তিপ্রস্তরটি ছাত্রলীগের মদদে সড়ক করার নামে ভেঙে ফেলে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সবশেষ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে আন্ডারপাস নির্মাণের কথা বলে খালেদা জিয়ার ভিত্তি প্রস্তরটি উপড়ে ফেলে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর (সওজ)।