মে ৯, ২০২৫

শুক্রবার ৯ মে, ২০২৫

কুমিল্লার বন্ধ চিড়িয়াখানা হচ্ছে আধুনিক ডিসি পার্ক

Deputy Commissioner Amirul Kaiser held a meeting with journalists to discuss various ongoing development projects in Comilla city.

কুমিল্লার মানুষের স্মৃতিতে মিশে থাকা একসময়ের প্রিয় ঠিকানা – কুমিল্লা চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন – দীর্ঘ চার বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকার পর নতুন করে প্রাণ ফিরে পেতে চলেছে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এই ঐতিহ্যবাহী স্থানটিকে আধুনিক রূপে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। পুরনো নাম বদলে এর নতুন নামকরণ করা হচ্ছে ‘আধুনিক ডিসি পার্ক’।

প্রায় ২০ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানার সংস্কারের জন্য আনুমানিক ৪০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। ইতিমধ্যেই, ২৫ কোটি টাকার টেন্ডার ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ইজিপি)-এর মাধ্যমে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়েছে।

বুধবার (৭ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় কুমিল্লা শহরে চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়সার সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এই তথ্য জানান। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

কুমিল্লার মানুষের চিত্তবিনোদনের অভাবের কথা উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, “কুমিল্লায় চিত্তবিনোদনের সুযোগ খুবই কম। এখানে তেমন কোনো পার্ক বা সবুজায়ন নেই বললেই চলে। ২০ একর জমির ওপর আগের বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানাটি এখন বন্ধ হয়ে আছে।”

উন্নয়ন প্রকল্পের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার জানান, জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে আধুনিক ডিসি পার্ক তৈরির জন্য ৪০ কোটি টাকার একটি বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি এবং বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ রোপণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

টাউনহল মার্কেটের ব্যবস্থাপনার বিষয়ে জেলা প্রশাসক উল্লেখ করেন, “আগের সরকারের আমলে এই মার্কেটের আয় কোনো বিশেষ ব্যক্তির কাছে যেত। তবে, ৫ আগস্টের পরবর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রতি মাসে ৬ লক্ষাধিক টাকা সরাসরি মার্কেটের অ্যাকাউন্টে জমা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”

মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরেন এবং এই কাজে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

জুলাই বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে কুমিল্লা ক্লাবের ধ্বংসাবশেষ থেকে এটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়ার জন্য একটি এডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

উজিরদিঘীর ভরাট প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, “এই দিঘীর ভরাট নিয়ে রেকর্ডের মালিক আবেদন করেছিলেন। তবে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে পরিবেশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে এটিকে ভরাট হওয়া থেকে রক্ষা করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করে আমিরুল কায়সার জানান, সদর দক্ষিণে একটি মালিকানাধীন পুকুরের অর্ধেক রাতের অন্ধকারে ভরাট করে ফেলা হয়েছিল। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পরিবেশ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং পুকুরটি পুনরায় খননের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও, ফসলি জমির মাটি কাটার অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা আদায়সহ ২৩ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।

নগরীর যানজট নিরসনের জন্য জেলা প্রশাসন কাজ করছে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, “শহরে প্রায় ৪০ হাজার অটোরিকশা চলাচল করে। অবৈধ অটোরিকশা যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ। অটোরিকশার সংখ্যা কমিয়ে নির্দিষ্ট আইডি কার্ড ও ড্রেসের মাধ্যমে শহরে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে এবং বাকি চালকদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান অথবা পরিবহনের ব্যবস্থা করা হবে।”

মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে প্রায় ১২টি ছোট-বড় বাজার রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে যানজট নিরসনের জন্য সেনাবাহিনীর পাশাপাশি ৩০০ জন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করেছে।

মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া, প্রেসক্লাবের সভাপতি এনামুল হক ফারুক এবং সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান প্রমুখ।

আরও পড়ুন