কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ক্লাস বর্জনের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) এক জরুরি সিন্ডিকেট সভার আহ্বান করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তবে নিয়মের তোয়াক্কা না করে সেই সিন্ডিকেটের আলোচ্য সূচি পরিবর্তন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে পাঁচজন ডিন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে সেই ডিন নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। শিক্ষকরা বলছেন, আলোচ্য সূচি পরিবর্তন করা নিয়মের ব্যত্যয় করেছেন এবং একজন শিক্ষকের যোগদান ঠেকিয়ে অন্যজনকে অবৈধভাবে ডিন নিয়োগ দিয়েছেন।
জানা যায়, জরুরি ওই সিন্ডিকেট সভা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯১ তম সিন্ডিকেট সভা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিভিন্ন অনিয়মের সুরাহা ও শিক্ষকদের উপর হামলার বিচারের দাবিতে ক্লাস বর্জন করে শিক্ষক সমিতি। দাবি না মানলে ক্লাস বর্জন আরও দীর্ঘ হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি। ক্লাস বর্জনের উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানের লক্ষ্যে সিন্ডিকেট সভা ডাকলেও উপাচার্যের ইচ্ছায় আলোচ্যসূচি পরিবর্তন করে ডিন নিয়োগের অ্যাজেন্ডা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে বিষয়টি নিয়মের ব্যত্যয় বলে আপত্তিও তুলেন দুইজন সিন্ডিকেট সদস্য।
এদিকে পাঁচ ডিন নিয়োগের মধ্যে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে ডিন নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে শিক্ষকরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ডিন নিয়োগ পাওয়ার কথা ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগ থেকে। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ডিন নিয়োগ পাওয়ার কথা ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো: এমদাদুল হকের।
গত ৩ মার্চ ১৬ মাসের শিক্ষা ছুটি শেষে যোগদানপত্র জমা দিলেও যোগদান কার্যকর করেনি প্রশাসন। ফলে সিন্ডিকেটের আলোচ্য পরিবর্তন করে তড়িঘড়ি করে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আহসান উল্ল্যাহকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ডিনের পদ থেকে বঞ্চিত মো: এমদাদুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ছুটি ৩.৪ ধারা অনুযায়ী আমি গত ৩ মার্চ শিক্ষা ছুটি শেষে বিভাগে যোগদান করার জন্য আবেদন করি। কিন্তু আইন বহির্ভূতভাবে গত ১১ দিনে আমার যোগদান পত্র কার্যকর না করে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
আইন অনুযায়ী বিভাগের আর্বতনে এবার ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ থেকে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন প্রাপ্য। এ ক্ষেত্রে আমার যোগদান পত্র কার্যকর না করে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগকে ডিন হওয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে আমি মনে করি।
এদিকে সিন্ডিকেটের আলোচ্যসূচি পরিবর্তন ও ডিন নিয়োগে অনিয়মের তুলেছেন শিক্ষকরা। শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ড. মাহমুদুল হাছান বলেন, আইনগতভাবে সিন্ডিকেট সভা এক বিষয়ে ডাকার পর অন্য বিষয়ে আলোচনা করা সম্ভব না। যে বিষয়ে ডাকা হয় সে বিষয়ে আলোচনা করা উচিত। ডিন নিয়োগতো প্রচলিত আইনের বিষয় এবং আইন দ্বারা এটা সুনির্দিষ্ট কার পরে কে হবে। এটা তো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষক জানে। ডিন নিয়োগের জন্য সিন্ডিকেট সভার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।
শিক্ষক সমিতির কার্যকরী সদস্য মোহাম্মদ আইনুল হক বলেন, সিন্ডিকেটের সভাপতি মাননীয় উপাচার্য চরম জ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষক সমিতির যে যৌক্তিক দাবিগুলোর ছিল সেগুলোর প্রতি ভ্রূক্ষেপ না করে অ্যাজেন্ডা পরিবর্তন করে ওনি অবৈধভাবে ডিন নিয়োগ দেওয়ার জন্য আজকের সিন্ডিকেট করেছেন। একজন শিক্ষকের যোগদান ঠেকিয়ে অন্যজনকে অবৈধভাবে ডিন নিয়োগ দিয়েছেন। উনার অবৈধ কর্মকাণ্ডের আরও একটি প্রমাণ দিয়েছেন তিনি। এ থেকে প্রমাণিত হয়, উনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চান না। প্রতিনিয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছেন এবং সামনের দিকেও বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে যাচ্ছেন।
শিক্ষক সমিতির সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক ড. জান্নাতুল ফেরদৌস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘উদ্ভূত’ পরিস্থিতি সমাধানে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় কীভাবে ডিন নিয়োগ দেওয়ার অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন অত্যন্ত লজ্জাজনক ব্যাপার। যখন একটি অ্যাজেন্ডার মধ্যে আরেকটি অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করা হয় তখন এ বিষয়টি প্রমাণিত হয় যে এখানে হীন উদ্দেশ্য রয়েছে। একজন কর্মকর্তা শিক্ষকদের হেনস্তা করলেন সেটা নিয়ে কোন আলোচনা করা হলো না, শিক্ষকদদের দাবি দাওয়া নিয়ে কোন আলোচনা করা হলো না। এটা কীভাবে সম্ভব? ছাত্র-ছাত্রীর পরেই আমরা শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান স্টেকহোল্ডার। কিন্তু আমাদের দাবি দাওয়া নিয়ে কোনো আলোচনা করা হয়নি।
এদিকে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বিজনেস ফ্যাকাল্টিতে ডিন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একজন শিক্ষক ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগদানপত্র প্রেরণ করেছেন কিন্তু তা গ্রহণ করা হয়নি শুধু ডিন হিসেবে আরেকজনকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য।
তবে নিয়োগ প্রক্রিয়া ঠিক আছে বলে দাবি করেছেন সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ডিন ড. মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ। তিনি বলেন, বিভাগীয় রোটেশন অনুযায়ী এখন ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগ পাবে। পরে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ।
এবিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম. আবদুল মঈনকে একাধিকবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি। তবে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, যোগদান পত্র কেন আটকিয়ে রাখছেন উপাচার্য ভালো বলতে পারবেন।