রবিবার ২৬ অক্টোবর, ২০২৫

এইচএসসিতে পাশের হারে সর্বনিম্ন কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড, পাসের হার ৪৮.৮৬%

নিজস্ব প্রতিবেদক

Rising Cumilla - Board of Intermediate and Secondary Education, Cumilla
কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড/ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় মোট এক লাখ এক হাজার ৯৯৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে এর মধ্যে পাস করেছে ৪৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ শিক্ষার্থী।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ১০টায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর শামছুল ইসলাম আনুষ্ঠানিকভাবে এই ফল ঘোষণা করেন।

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বিভাগভিত্তিক ফলাফলে পাসের হারে বিজ্ঞান বিভাগ অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও, সামগ্রিক হার তুলনামূলকভাবে কম।

বিভাগপরীক্ষার্থী সংখ্যাপাস করা শিক্ষার্থীর সংখ্যাপাসের হার
বিজ্ঞান২৬ হাজার ২৭৪ জন১৬ হাজার ২৫১ জন৬২ দশমিক ৬৪ শতাংশ
মানবিক৪৮ হাজার ১২৯ জন২০ হাজার ৫৯০ জন৪৪.০৮ শতাংশ
বিজনেস স্টাডিজ (ব্যবসায় শিক্ষা)২৭ হাজার ৫৯৪ জন১১ হাজার ৮১৬ জন৪৩ দশমিক ৯০ শতাংশ

প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, কুমিল্লা বোর্ডের অধিভুক্ত ছয় জেলার মধ্যে সবেচেয়ে বেশি ফল খারাপ করেছে নোয়াখালী জেলা। এ জেলায় পাসের হার ৪০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। পাসের হার সর্বোচ্চ কুমিল্লা জেলায়- ৫২ দশমিক ১৫ শতাংশ। এবার শূন্য শতাংশ পাস করেছে নয়টি প্রতিষ্ঠানে, শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠান পাঁচটি।

কুমিল্লা বোর্ডের ফলাফল বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, ফেনী জেলার পাসের হার ৪৮ দশমিক ৭২ শতাংশ, লক্ষ্মীপুরে ৪৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ, চাঁদপুরে ৪৮ দশমিক ৬২ শতাংশ, এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ৫১ দশমিক ৮১ শতাংশ।

এ বিষয়ে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর শামছুল ইসলাম জানান, অন্যান্য সময়ে কেন্দ্রের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। এবার ১৬২টি কেন্দ্র বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া ইংরেজিতে পাসের হার ৬৫ দশমিক ২৮ শতাংশ। উচ্চতর গণিতেও পাসের হার কম। ইংরেজিতে ফেলের হার বেশি থাকায় সামগ্রিক ফলাফলে প্রভাব পড়েছে।

এদিকে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ বছর পাসের হার গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

এর আগে এই বোর্ডে ২০২১ সালে পাসের হার ছিল ৯৭ দশমিক ৪৯, ২০২২ সালে ৯০ দশমিক ৭২, ২০২৩ সালে ৭৫ দশমিক ৩৯, ২০২৪ সালে ৭১ দশমিক ১৫ এবং এবার ২০২৫ সালে পাস করেছে ৪৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ। যা গত পাঁচ বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম।

তবে এ বছরের ফলে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে আছে। এবারের ফলে ছেলেদের পাসের হার ৪২ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং মেয়েদের পাসের হার ৫৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। জিপিএ-৫-এ এগিয়ে আছে মেয়েরা। ছেলেদের জিপিএ-৫-এর সং্খ্যা ৯৫৮টি আর এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন এক হাজার ৭৪৯ জন মেয়ে শিক্ষার্থী।

এ বছর কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের পাঁচটি কলেজ শতভাগ পাসের গৌরব অর্জন করেছে। অন্যদিকে, নয়টি কলেজ থেকে কোনো পরীক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি।

উল্লেখ্য, এবার দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৫৮.৮৩ শতাংশ, যা গত বছরগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে গড় পাসের হার ছিল ৭৭.৭৮ শতাংশ এবং ২০২৩ সালে ছিল ৭৮.৬৪ শতাংশ। এর পরিপ্রেক্ষিতে, এবার পাসের হার প্রায় ২০ শতাংশের বেশি কমেছে।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফলে দেখা গেছে, এ বছর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে পাসের হারে এগিয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড, আর পিছিয়ে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে এ বছরের মোট পাসের হার ৬৪ দশমিক ৬২। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৪৮ দশমিক ৮৬।

এ ছাড়া রাজশাহীতে ৫৯ দশমিক ৪০ শতাংশ, যশোরে ৫০ দশমিক ২০ , চট্টগ্রামে ৫২ দশমিক ৫৭, বরিশালে ৬২ দশমিক ৫৭, সিলেটে ৫১ দশমিক ৮৬, দিনাজপুরে ৫৭ দশমিক ৪৯, ময়মনসিংহে ৫১ দশমিক ৫৪ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছেন।

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের আলিম পরীক্ষায় ৭৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পাসের হার ৬২ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র অনুযায়ী, এ বছর দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেন। এর মধ্যে ৬ লাখ ১৮ হাজার ১৫ জন ছাত্র এবং ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬ জন ছাত্রী।

ঢাকা বোর্ডে পরীক্ষার্থী ২ লাখ ৯১ হাজার ২৪১, রাজশাহীতে ১ লাখ ৩৩ হাজার ২৪২, কুমিল্লায় ১ লাখ ১ হাজার ৭৫০, যশোরে ১ লাখ ১৬ হাজার ৩১৭ ও চট্টগ্রামে ১ লাখ ৩৫ জন। এ ছাড়া বরিশালে পরীক্ষার্থী ৬১ হাজার ২৫, সিলেটে ৬৯ হাজার ৬৮৩, দিনাজপুরে ১ লাখ ৩ হাজার ৮৩২ এবং ময়মনসিংহে ৭৮ হাজার ২৭৩ জন। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আলিম পরীক্ষার্থী ৮৬ হাজার ১০২ জন। কারিগরি বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৯ হাজার ৬১১ জন।

আরও পড়ুন