জানুয়ারি ১৬, ২০২৫

বৃহস্পতিবার ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫

উত্তরাঞ্চলে নদীভাঙনে আতঙ্ক, বন্যায় পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ

Rising Cumilla.Com - Fear of river erosion in north
ছবি: সংগৃহীত

উজানের পাহাড়ি ঢল আর কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে তিস্তাপাড়ে অসময়ে দেখা দিয়েছে বন্যা। এতে রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও গাইবান্ধার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। কোথাও কোথাও দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে গবাদি পশুসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে সড়ক ও বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট।

গতকাল রোববার সন্ধ্যায় নদনদীর পানি কিছুটা কমেছে। তবে সকালে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলেছে, উজানে তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় পানিপ্রবাহ কমলেও ভাটি এলাকা কাউনিয়ায় আরও বাড়তে পারে। গতকাল দুপুরে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শনিবার সন্ধ্যায় পানি ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও রাত ১১টায় বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ পয়েন্টে বিপৎসীমা ২৯ দশমিক ৩১ সেন্টিমিটার।

জানা গেছে, তিস্তা নদীবেষ্টিত গংগাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী, কোলকোন্দ, গজঘণ্টা, আলমবিদির, নোহালী, কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া, মধুপুর, হারাগাছ, ঢুসমারা, শহীদবাগের গান্নার চর, পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ও পাওটানার প্রায় ৫০টি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার বিভিন্ন জায়গায় গ্রামীণ রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। বন্যার আতঙ্কে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের মানুষের নির্ঘুম রাত কেটেছে। এমন আকস্মিক বন্যায় চরম দুর্ভোগে পড়ছে বানভাসিরা। এই নিয়ে অষ্টমবারের মতো বন্যার কবলে পড়ল তিস্তাপাড়ের মানুষ।

গংগাচড়া উপজেলার ইউপি সদস্য মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক দিন থেকে যে বন্যা ও পানির আশঙ্কা করা হয়েছিল তাই হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের খুব বেশি তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। হয়তো এখন আসবে, খোঁজখবর নেবে। আমরা জনপ্রতিনিধি হিসেবে কী করতে পারি, প্রশাসন বরাদ্দ দিলে তখন আমরা বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহ হচ্ছে। যা রাতে আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া পানি বাড়ায় তিস্তা-সংলগ্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে সবসময় মনিটরিং করা হচ্ছে। যাতে রাস্তা ঘাট, ব্রিজ ভেঙে না যায় সেই বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাজ করা হচ্ছে।

লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতি: লালমনিরহাটে এ বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২৫ হাজার পরিবার। তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ বিপৎসীমার কাছাকাছি থাকায় আতংকিত হয়ে পড়ছে এখানকার মানুষেরা। নদী তীরবর্তী এলাকার বেশ কিছু রাস্তাঘাট ব্রিজ কালভার্ট পানির তোড়ে ভেঙে গেছে। আমন ধান ও বিভিন্ন সবজি ক্ষেত ডুবে আছে পানিতে। দীর্ঘ সময় ডুবে থাকলে এসব ফসলের মারাত্মক ক্ষতির শঙ্কা করছেন চাষিরা। একই সাথে বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে বেশ কিছু পুকুরের মাছ।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনিল কুমার বলেন, রোববার সকাল ৬টায় তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ বেড়ে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর প্রবাহিত হয়। দুপুরে তা কমে গিয়ে বিপৎসীমার নিচে নেমে আসে। আশা করছি দ্রুতই বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, বন্যাকবলিতদের জন্য ১৩ লাখ টাকা ও ৯০ মেট্রিকটন জিআর চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আজকে স্বল্প পরিসরে বিতরণ শুরু করেছি। সোমবার সকলের কাছে পৌঁছে যাবে ত্রাণ। বন্যা বাড়লে তা মোকাবিলা করতে জেলা উপজেলা প্রশাসন আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

Rising Cumilla.Com - Flood in north
ছবি: সংগৃহীত

কুড়িগ্রামে বাড়ছে ভাঙন আতঙ্ক: কুড়িগ্রামে ধরলাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। প্লাবিত হয়েছে তিস্তার তীরবর্তী রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা, বিদ্যানন্দ, উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া, বজরা, থেতরাই, গুনাইগাছ এবং চিলমারী উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের আংশিক অংশ। এসব ইউনিয়নের চর ও নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৪ শতাধিক পরিবার, গ্রামীণ কাঁচা সড়কসহ ১৫৯ হেক্টর জমির রোপা আমন এবং মৌসুমি ফসলের খেত নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ জানায়, ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বৃদ্ধি পেলেও তা বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার খাদিজা বেগম বলেন, এ উপজেলায় বন্যা হতে পারে তাই আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করে চরাঞ্চলের মানুষজনকে নিরাপদ স্থানে ও আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া পানিবন্দিদের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

গাইবান্ধার বন্যা পরিস্থিতি: গাইবান্ধা জেলার ১৬৫টি চরের নিম্নাঞ্চলে পানি উঠতে শুরু করেছে। তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও গাইবান্ধার প্রধান তিন নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আপাতত জেলায় বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে পাউবো।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ সহকারী প্রকৌশলী রায়হানুল ইসলাম বলেন, উজান থেকে পানি আসছে এবং গত কয়েকদিনের বৃষ্টির পানিতে জেলার সব নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। চরের কিছু নিচু অঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেলেও করতোয়া, ঘাঘট ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আপাতত এ পানিতে বন্যার আশঙ্কা নেই। আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি।