
দীর্ঘ পরিকল্পনার পর অবশেষে বহুল প্রতীক্ষিত একক পর্যটন ভিসা চালু করতে যাচ্ছে উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ (জিসিসি)।
সৌদি আরবের পর্যটনমন্ত্রী আহমেদ আল-খাতিব নিশ্চিত করেছেন যে, আগামী বছর থেকেই এই ভিসা চালু হবে। এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে গালফ নিউজ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন এই প্রকল্পটি চালু হলে পর্যটকরা একটিমাত্র ভিসা ব্যবহার করেই জিসিসিভুক্ত মোট ৬টি দেশ— সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, কুয়েত ও ওমান ভ্রমণ করতে পারবেন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এতে পৃথক ভিসার তুলনায় খরচও অনেকটাই কম পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
৪ বছরের সমন্বিত প্রচেষ্টার ফল
বাহরাইনের রাজধানী মানামায় গালফ গেটওয়ে ইনভেস্টমেন্ট ফোরামে দেওয়া বক্তৃতায় সৌদি পর্যটনমন্ত্রী আহমেদ আল-খাতিব বলেন, চার বছর ধরে উপসাগরীয় দেশগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টার পর এই উদ্যোগটি অবশেষে মাইলফলকে পৌঁছেছে। তিনি এই নতুন একক ভিসা প্রকল্পকে উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের দেশগুলোর মাঝে ভ্রমণ ও পর্যটন খাতকে সংযুক্ত করার অন্যতম বৃহৎ পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
আল-খাতিব আরও বলেন, জিসিসি এখন পর্যটন খাতে এক ঐতিহাসিক সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আঞ্চলিক সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, আধুনিক অবকাঠামো ও নিরাপদ পরিবেশের কারণে এই অগ্রযাত্রা সম্ভব হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, জিসিসি দেশগুলো বর্তমানে এক ঐতিহাসিক রূপান্তরের সাক্ষী হচ্ছে; যেখানে পর্যটন খাত এখন তেল ও বাণিজ্যের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক স্তম্ভে পরিণত হয়েছে।
ভিসার নাম ও অনুমোদনের প্রক্রিয়া
জিসিসির এই একক ভিসায় প্রবেশের অনুমতিপত্রের দাপ্তরিক নাম হবে ‘জিসিসি গ্র্যান্ড ট্যুরস ভিসা’। এর মাধ্যমে ভ্রমণকারীরা একবার আবেদন করেই জিসিসিভুক্ত ছয়টি দেশ ভ্রমণ করতে পারবেন।
২০২৩ সালের নভেম্বরে ওমানে অনুষ্ঠিত জিসিসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে এই প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। সে সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শেনজেন ভিসার আদলে তৈরি যৌথ মডেল হিসেবে জিসিসি একক ভিসার পরিকল্পনা করা হয়।
জিসিসি কর্মকর্তারা বলেছেন, এই একক ভিসা উপসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য পরিকল্পনার একটি মূল অংশ হবে। এটি এমন আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে যারা একাধিক দেশে সহজে ভ্রমণ করতে চান, কিন্তু পুনরায় কাগজপত্র, আলাদা ফি ও ভিন্ন ভিন্ন নিয়মে পড়তে চান না।
- এই ভিসা কেবল পর্যটন ও পারিবারিক ভ্রমণের জন্য প্রযোজ্য হবে।
- আবেদন অনলাইনে করা যাবে।
- ভ্রমণকারীরা চাইলে একক দেশ বা ছয়টি দেশই বেছে নিতে পারবেন; যার মেয়াদ এক থেকে তিন মাসের মধ্যে হতে পারে।
সহজ আবেদন প্রক্রিয়া ও প্রয়োজনীয় নথি
জিসিসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আবেদন প্রক্রিয়াও সহজ হবে। ভিসা চালুর পর আবেদনকারীদের নিম্নলিখিত নথিগুলো জমা দিতে হবে:
- কমপক্ষে ছয় মাস মেয়াদী পাসপোর্ট
- আবাসনের তথ্য
- পাসপোর্ট সাইজ ছবি
- ভ্রমণ বিমা
- আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ
- ফেরার বা পরবর্তী গন্তব্যের টিকিট
ভ্রমণকারীরা সরকারি অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে নথি আপলোড, ফি পরিশোধ এবং ই-মেইলে ডিজিটাল ভিসা গ্রহণ করতে পারবেন।
পর্যটনমন্ত্রী আল-খাতিব উপসাগরীয় অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান বিমান যোগাযোগকে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে চলাচল সহজ করার গুরুত্বের কারণ হিসেবে তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, গত বছর উপসাগরীয় অঞ্চলের চারটি বৃহৎ এয়ারলাইনস প্রায় ১৫ কোটি যাত্রী পরিবহন করেছে। এর মধ্যে ৭ কোটি যাত্রী উপসাগরীয় দেশগুলোর ভেতরে ভ্রমণ করেছেন। এই পরিসংখ্যানই উপসাগরীয় অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ ভ্রমণে এখনো কতটা সম্ভাবনা রয়েছে, সেটি তুলে ধরে।
উপসাগরীয় কয়েকটি দেশের কর্মকর্তারা মনে করছেন, জিসিসি একক ভিসা চালু হলে পর্যটকদের অবস্থানকাল বাড়বে, একাধিক শহরে ভ্রমণ বৃদ্ধি পাবে এবং ব্যয়ও ছড়িয়ে পড়বে বিভিন্ন দেশে। এই বিষয়ে আগামী কয়েক মাসে আরও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ এবং আগামী বছর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগে আবেদন পোর্টাল চালু করা হবে।










