রবিবার ১৩ জুলাই, ২০২৫

সেন্টমার্টিনে যেতে পর্যটকদের দিতে হবে ‘পরিবেশ সংরক্ষণ ফি’

Rising Cumilla - Saint Martin Island
ছবি: সংগৃহীত

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের নাজুক বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকার একটি বড় আকারের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এই পরিকল্পনার আওতায় পর্যটকদের কাছ থেকে ‘পরিবেশ সংরক্ষণ ফি’ আদায় করা হবে এবং দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা হবে।

গতকাল শনিবার (১২ জুলাই) পরিবেশ অধিদপ্তরে অনুষ্ঠিত সেন্ট মার্টিনের ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা সংক্রান্ত এক উচ্চ পর্যায়ের সভায় এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, সেন্ট মার্টিনের অনন্য প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণে তিন বছর মেয়াদী একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যা আগামী আগস্ট মাস থেকে শুরু হবে।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, সেন্ট মার্টিন পরিদর্শনে আসা পর্যটকদের কাছ থেকে পরিবেশ সংরক্ষণ ফি আদায় করবে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ। এই ফি’র অর্থ সরাসরি দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় ব্যয় করা হবে। তবে, ফির পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।

দ্বীপের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং পরিবেশের উপর নির্ভরতা কমাতে বিকল্প কর্মসংস্থানের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে দ্বীপের ৫০০ পরিবারকে হাঁস-মুরগি পালন, চিপস তৈরি এবং কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে দুজন কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের জন্য সহায়তা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এ কে এম রফিকুল ইসলাম জানান, প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এই বিকল্প কর্মসংস্থানের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে, যার আওতায় সেন্ট মার্টিনের প্রায় ১০ হাজার বাসিন্দা উপকৃত হবেন।

প্লাস্টিক নিষিদ্ধকরণ ও পরিবেশ প্রহরীর নিয়োগ

পরিবেশ রক্ষায় সরকারের কঠোর পদক্ষেপের অংশ হিসেবে অক্টোবরের পর সেন্ট মার্টিনে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হবে। সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে এর বিকল্প ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হবে।

এছাড়াও, দ্বীপের পরিবেশ সংরক্ষণে ‘পরিবেশ প্রহরী’ নিয়োগ দেওয়া হবে। জলবায়ু-সহিষ্ণু ধানের জাত চাষ, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সাগরলতা রোপণ এবং কেয়া বন গঠনের মতো উদ্যোগগুলোও এই পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত।

সেন্ট মার্টিনের ৪টি জোন:

সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) সেন্ট মার্টিনের একটি বিস্তারিত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে। এই পরিকল্পনায় সেন্ট মার্টিনকে চারটি ভিন্ন জোনে ভাগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে:

  • জোন-১ (মাল্টিপল ইউজ জোন): এই অঞ্চলে পরিবেশবান্ধব অবকাঠামোর অনুমোদন দেওয়া হবে।
  • জোন-২ (বাফার জোন): সেন্ট মার্টিনের দক্ষিণের সংবেদনশীল এলাকাকে রক্ষা করার জন্য এটি ‘বাফার জোন’ হিসেবে কাজ করবে।
  • জোন-৩ (জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ জোন): এখানে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা হবে, তবে শর্ত সাপেক্ষে স্থানীয়রা প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করতে পারবেন।
  • জোন-৪ (কঠোর প্রকৃতি সংরক্ষণ জোন): এই অঞ্চলে কঠোরভাবে প্রকৃতি সংরক্ষণ করা হবে এবং সব ধরনের প্রবেশ ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে।

সিইজিআইএস-এর জ্যেষ্ঠ গবেষক এইচ এম নুরুল ইসলাম জানান, অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনের কারণে সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। হোটেল-রিসোর্ট নির্মাণে বিদেশি প্রজাতির উদ্ভিদের বিস্তার, অতিরিক্ত লবস্টার আহরণের ফলে এর বিলুপ্তি, এবং জাহাজের নোঙরের কারণে প্রবাল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মতো সমস্যাগুলো তিনি উল্লেখ করেন।

সভায় পরিবেশ সচিব ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খানম, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান সহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। টেকনাফের ইউএনও অনলাইনে যুক্ত হয়ে সভায় অংশ নেন।

আরও পড়ুন