
যক্ষ্মা, যা ইংরেজিতে টিউবারকিউলোসিস বা টিবি নামে পরিচিত, একটি ছোঁয়াচে রোগ। এটি মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয় এবং নিঃশ্বাসের মাধ্যমে একজন থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। যখন একজন টিবি আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি, কাশি, কথা বলা বা গান গাওয়ার সময় বাতাসে এই ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে দেয়, তখন তা সুস্থ মানুষের শরীরে প্রবেশ করে।
টিবি কেন ফুসফুসকে বেশি আক্রমণ করে?
এই রোগটি সাধারণত শরীরের সেই অংশগুলোকেই আক্রমণ করে যেখানে রক্ত ও অক্সিজেনের পরিমাণ বেশি। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। ফুসফুসের টিবিকে বিজ্ঞানের ভাষায় পালমোনারি টিবি বলা হয়। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য, যা থেকে বোঝা যায় কেন ফুসফুসের যত্ন নেওয়া জরুরি।
বাংলা ভাষার প্রখ্যাত কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যও যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়েই প্রাণ হারিয়েছিলেন। সেই সময় এই রোগের কোনো চিকিৎসা ছিল না, কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলেছে। সময়মতো চিকিৎসা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এই রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। হাঁচি বা কাশির সময় মুখ ঢেকে রাখা টিবি সংক্রমণ কমানোর একটি সহজ উপায়।
যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ কী?
যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ নির্ভর করে শরীরের কোন অংশ আক্রান্ত হয়েছে তার ওপর। তবে যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি ফুসফুসকে আক্রমণ করে, তাই কিছু সাধারণ লক্ষণ সম্পর্কে জানা জরুরি। সেগুলো হলো:
- তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি
- কাশির সঙ্গে রক্ত পড়া
- রাতে ঘাম হওয়া
- ওজন কমে যাওয়া বা খিদে কমে যাওয়া
- অতিরিক্ত ক্লান্তি লাগা
- বুকে ব্যথা ও ক্ষুধামান্দ্য
- জ্বর ও শীত শীত ভাব
এক্সট্রাপালমোনারি টিবি: যখন রোগ অন্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে
কখনও কখনও টিবির ব্যাকটেরিয়া ফুসফুস থেকে শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে, যা এক্সট্রাপালমোনারি টিবি নামে পরিচিত। এটি হাড়, কিডনি বা লিম্ফ নোডের মতো অঙ্গকে আক্রমণ করতে পারে। এর লক্ষণগুলো হলো:
লিম্ফ নোড টিবি: লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া।
হাড়ের টিবি: হাড়ে ব্যথা, ফোলা ভাব ও বিকৃতি।
কিডনির টিবি: প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত এবং কোমরে ব্যথা।
মস্তিষ্কের টিবি (মেনিনজাইটিস): মাথা ব্যথা, জ্বর, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া এবং চেতনা হ্রাস।
সাধারণ কাশি ও যক্ষ্মার কাশির মধ্যে পার্থক্য
কাশি হলে কীভাবে বুঝবেন সেটি সাধারণ কাশি নাকি যক্ষ্মার লক্ষণ? দুটি কাশির মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে:
বৈশিষ্ট্য | সাধারণ কাশি | যক্ষ্মার কাশি |
সময়কাল | কয়েক দিন বা এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। | তিন সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে চলতে থাকে। |
ধরন | শুকনো বা শ্লেষ্মাযুক্ত হতে পারে। | প্রথমে শুকনো থাকে, পরে শ্লেষ্মা ও রক্ত আসতে পারে। |
অন্যান্য লক্ষণ | সাধারণত জ্বর, সর্দি, গলা ব্যথা ইত্যাদি দেখা যায়। | রাতে ঘাম, ওজন কমে যাওয়া, ক্ষুধামান্দ্য, দুর্বলতা ও বুকে ব্যথা থাকে। |
জ্বরের ধরন | কয়েক দিনের মধ্যে সেরে যায়। | হালকা থেকে মাঝারি ধরনের জ্বর দীর্ঘদিন ধরে থাকে, যা সাধারণত রাতের দিকে বাড়ে। |
যক্ষ্মার চিকিৎসা ও প্রতিরোধ
যদি আপনার কাশি তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে থাকে এবং তার সঙ্গে অন্যান্য লক্ষণও দেখা যায়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যক্ষ্মা একটি নিরাময়যোগ্য রোগ। সময়মতো চিকিৎসা শুরু করলে এটি সম্পূর্ণ সারিয়ে তোলা সম্ভব। এর জন্য সাধারণত ৬ মাসের অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স নিতে হয়।
সূত্র : আজকাল