
‘মুক্ত গণমাধ্যম’—যেন এক চমকপ্রদ আশ্বাস, যার বাস্তবতা আসলে এক নিষ্ঠুর পরিহাস। আধুনিক সভ্যতার সবচেয়ে পরিপাকভূমিতে দাঁড়িয়েও আমরা ভুলে যাই—গণমাধ্যম নিজেই একটি কর্পোরেট সত্তা, একটি ক্ষমতাকেন্দ্র, যার রক্তনালী দিয়ে বয়ে চলে বিজ্ঞাপনদাতা, মালিকানাধীন রাজনৈতিক বলয়, আর বহুজাতিক কোম্পানির স্বার্থসন্ধানী পুঁজির বিষাক্ত প্রবাহ।
এখানে ‘সত্য’ কেবল এক গৌণ উপাদান—যেটিকে প্রয়োজনে আলোকিত করা হয়, আর প্রয়োজনে গিলে ফেলা হয় অন্ধকারে।
গণমানুষ? তারা কি সত্য চায়? না, তারা চায় আশ্বাস। তারা চায় এমন সংবাদ, যা তাদের বিশ্বাসকে নিরঙ্কুশ বৈধতা দেয়, যা তাদের বদ্ধ মানসিকতা রক্ষা করে, যাতে তাদের কোনো দায় না নিতে হয়।
ফলে গণমাধ্যমও পালটে যায়—একটি সান্ত্বনা-উৎপাদনকারী যন্ত্রে। সত্য এখানে বিপজ্জনক, অপ্রিয়, অস্বস্তিকর। সত্য চিৎকার করে উঠে, অথচ শ্রোতা থাকে বেছে নেওয়া নীরবতায়।
তবুও কিছু সংবাদকর্মী রয়ে যান, যাদের জীবনের অনিবার্য পরিণতি যেন হয়ে দাঁড়ায় নিষ্ফল এক মিশন—পুঁজির দখলে থাকা ভূগোলের ভেতর সত্যের সীমানা খোঁজা।
তাদের হাতে থাকে কলম, সামনে থাকে প্রতিপক্ষ: কর্পোরেট সিস্টেম, রাজনৈতিক হাইড্রা, আর এক নির্বিকার সমাজ।
এসব লড়াইয়ে জয় আসে না। আসে নিঃসঙ্গতা, পেশাগত অনিশ্চয়তা, কিংবা কোনও একদিন নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার নীরব ভয়।
তবুও আমরা লিখি। কারণ আমরা জানি, হয়ত কোনোদিন সবকিছু বদলাবে না—তবুও লেখার দায় ফুরায় না। আমরা লিখি, যেন লিপিবদ্ধ থাকে—এই সময়ের নিষ্ঠুর বিকৃতি, এই সভ্যতার নির্মম বাছাই।