
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে দাবি করা হচ্ছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত সাবেক সংসদ সদস্য ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমের বাড়ি থেকে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে ৯০০ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে।
তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে এই দাবিটি সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার একাধিক ভিডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে এই গুজব ছড়ানো হচ্ছে।
ভিডিওর উৎস ও সত্যতা যাচাই
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে কোনো নির্দিষ্ট সূত্রের উল্লেখ নেই এবং সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্যও দেখানো হয়নি। রিউমর স্ক্যানার টিম ভিডিওটিতে থাকা ফুটেজগুলো আলাদাভাবে যাচাই করেছে।
প্রথম ভিডিও যাচাই: রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে এসএ টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত বছরের ৯ আগস্ট প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ভাইরাল ভিডিওর একটি অংশের সাথে এই প্রতিবেদনের ফুটেজের মিল রয়েছে। এসএ টিভির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এটি মূলত ডিবি অফিসে বিশেষ অভিযানের দৃশ্য। অর্থাৎ, এটি মমতাজ বেগমের বাসা থেকে টাকা উদ্ধারের দৃশ্য নয়।
দ্বিতীয় ভিডিও যাচাই: ভাইরাল ভিডিওতে ‘মমতাজ ভিলা’ লেখা একটি নামফলক দেখা যায়। রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ইনডিপেনডেন্ট টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনের একটি ফুটেজের সাথে ভাইরাল ভিডিওর এই অংশের হুবহু মিল রয়েছে।
ইনডিপেনডেন্ট টিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এটি ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেপ্তার হওয়া ঢাকার গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়ার লালমোহন সাহা স্ট্রিটের বাসায় র্যাবের অভিযানের দৃশ্য। সেই সময় র্যাব ওই বাসা থেকে সাড়ে ২৬ কোটি টাকা, সোয়া ৫ কোটি টাকার এফডিআরসহ বিদেশি মুদ্রা ও স্বর্ণ জব্দ করেছিল। এটিও মমতাজ বেগমের বাসা থেকে টাকা উদ্ধারের কোনো ঘটনা নয়।
এছাড়া প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে সম্প্রতি মমতাজ বেগমের বাড়িতে সেনাবাহিনীর অভিযান পরিচালনার কোনো তথ্য গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, মমতাজ বেগমের বাড়িতে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে ৯০০ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে- শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
উল্লেখ্য, গত ১২ মে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত একটি হত্যা মামলায় মমতাজ বেগমকে গ্রেফতার করা হয়। গত ১৭ মে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর পর দুটি ভিন্ন মামলায় তাকে ৬ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।