বিশ্ব হিজাব দিবস আজ। ‘হিজাব’ মুসলিম নারীর শালীনতার মুকুট। মুসলিম নারীর আত্মবিশ্বাস ও মনোবল বৃদ্ধির তলোয়ার। জুলাইয়ের স্ফূলিঙ্গের আন্দোলনে হিজাবী নারীদের অবদান অনস্বীকার্য। হিজাবী মানেই ঘরকোণে নয়, হিজাব মুসলিম সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যের পোশাক। কিন্তু পোশাকের স্বাধীনতা যেখানে মূখ্য, হিজাবী নারীরা সেখানে গৌণ।
এই পোশাক ও পরিহিতাকে সমাজ-রাষ্ট্র উভয়ের সম্মান জানানো, দৃষ্টি ভঙ্গি পরিবর্তন, হিজাবীদের নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা দূর করার পাশাপাশি পোশাক বৈষম্যের শিকার নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাদিয়া আফরোজ।
‘হিজাব মুসলিম নারীর ঈমান’ (০১)
হিজাব শুধুমাত্র এক টুকরো কাপড়ই নয়, হিজাব মুসলিম মেয়েদের শালীনতা রক্ষা আর সৌন্দর্য ঢাকার অবলম্বন ।হিজাব মুসলিম নারীদের ওপর সৃষ্টিকর্তার দেয়া ফরজ বিধান।আল্লাহ তায়ালা মুমিন নারীদেরকে আদেশ করেছেন, তারা যেন ঘর থেকে বের হওয়ার সময় নিজেদের চাদরের এক অংশ মুখের উপর নামিয়ে রাখে আর চলার জন্য শুধুমাত্র চোখ খোলা রাখে।পরিচয় শনাক্তকরণের নামকরে নারীকে বাধ্য করা হচ্ছে হিজাব খুলতে।অথচ আধুনিক যুগে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ব্যবহার করে খুব সহজেই পরিচয় শনাক্তকরণের কাজটি করা যায়।হিজাবের মাধ্যমে নারীর। সৌন্দর্য ঢাকা থাকে, যার ফলে পুরুষের লোলুপদৃষ্টি আর ইভটিজিং এর মতো ঘটনাসমূহ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।হিজাব শুধুমাত্র নিজের আব্রু রক্ষার জন্য নয়, তারসাথে একজন পুরুষের কামনার দৃষ্টি থেকে নারীর সৌন্দর্যকে হেফাজত করার ও মাধ্যম
নিশাত আর লিমা
লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
‘শিক্ষাঙ্গনে হিজাবীদের হেনস্তা বন্ধ হোক’ (০২)
হিজাব মুসলিম নারীর সম্মানের প্রতীক।মুসলিম সংখ্যাগরিষঠ দেশ হয়েও বিশেষ করে শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের বোনদের এখনো হয়রানি হতে হয় নিকাব ইস্যুতে। শিক্ষাঙ্গন মেধা বিকাশের ক্ষেত্র, চিন্তা তৈরির কারখানা।কাজেই একজন নারীকে বিচার করতে হলে তা হওয়া উচিৎ তার মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী। পোশাকের স্বাধীনতা যদি বাকি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য হয়,তবে নিকাব পরিধানকারীর জন্য কেন তাতে হস্তক্ষেপ করা হবে? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিকাব পরে ক্লাস করা,ভাইভা বোর্ডে বা হলে পরিক্ষায় বসার ক্ষেত্রে হিজাব, নিকাব খোলা নিয়ে হেনস্তার করা হয়।শ্রেণি উপাস্থাপনাতে ভালো প্রস্তুতির পর ও নিকাব ইস্যুতে নম্বরে বৈষম্য করা হয়।তাই নিরাপত্তার অজুহাতে মুসলিম নারীর অধিকার লংঘনের এ অনুশীলন বন্ধ করা জরুরি।
মালিহা রহমান তাসনিয়া
লেখক: শিক্ষার্থী, প্রয়াস ইনস্টিটিউট অফ স্পেশাল এডুকেশন এন্ড রিসার্চ, বিইউপি।
‘হিজাব মুসলিম নারীর শালীনতার প্রতীক’ (০৩)
হিজাব মুসলিম নারীদের ব্যক্তিত্বের বাহক । সমাজে অনেক নারী হিজাবকে স্বাধীনতা, আত্মপরিচয় ও গর্বের প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করেছেন, যা সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। তারা হিজাব পরে কর্মক্ষেত্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সামাজিক ক্ষেত্রে সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন।হিজাব কোনো বাঁধা নয় বরং নারীর শক্তি ও মর্যাদার প্রতিফলন। হিজাব নারীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা শক্তিশালী করে। অনেক নারী হিজাব পরেও চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষিকা, ব্যবসায়ীসহ নানা পেশায় সফল হচ্ছেন। হিজাব শুধু ধর্মীয় অনুশীলন নয়, এটি নারীর জন্য এক আত্মমর্যাদার ঢাল, যা তাকে আরও সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ করে তোলে। সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে সমাজে হিজাব পরিহিত নারীদের প্রতি আরও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা জরুরি।
ইসাবাহ নুফায়ের
লেখক: শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়।
‘হিজাবী মানেই জঙ্গি নয়’ (০৪)
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কতৃর্ক হিজাব পরিধান মৌলিক বিধান যা মুসলিম নারীদের জন্য নামাজ, রোজা, হজ্জ যাকাতের, মতোই ফরয। কিন্তু মুসলিম নারীরা এই বিধান পালন করতে গিয়ে জঙ্গি বা উগ্রবাদের ট্যাগের শিকার হয়। হিজাব কখনোই উগ্রবাদ বা সহিংসতার সাথে সম্পর্কিত নয়। ইসলাম শান্তি ও সহানুভূতির ধর্ম, এবং হিজাবের উদ্দেশ্য হলো নারীদের শালীনতা এবং সম্মান বজায় রাখা। ইসলাম কোনো অবস্থাতেই সহিংসতা বা উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডের অনুমোদন দেয় না। হিজাব পরিধান করাটা নারীর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, যা ইসলামিক বিধান অনুসারে আল্লাহর প্রতি তার আনুগত্য এবং শালীনতা প্রকাশের একটি উপায়।এটি একটি ধর্মীয় কর্তব্য এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি অন্যতম উপায়।
তৌফিকা জাহান তীব্র
লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
‘টেলিভিশনের পর্দায় হিজাব কেন স্বাভাবিক নয়?’ (০৫)
বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে হিজাব পরিহিত নারীদের উপস্থিতি এক শব্দে বলা চলে ‘বিরল’। হিজাব শুধু ইসলামি শরিয়তের একটি প্রতীকই নয় বরং এটি বর্তমান বাংলাদেশের অন্যতম একটি বৃহৎ সংস্কৃতিও বটে। তাহলে হিজাবকে কেন দেশের ব্রডকাস্ট ট্রান্সমিশন মিডিয়াগুলোতে করে রাখা হয়েছে সংকীর্ণতার প্রতীকস্বরূপ? প্রচলিত সৌন্দর্যের মানদণ্ড কিংবা দর্শকপ্রিয়তার অজুহাতে হিজাবধারীদের প্রতিনিয়ত উপেক্ষা করা হয়। অথচ, যোগ্যতার প্রশ্নে তাঁরা কোনো দিক থেকেই পিছিয়ে নেই। শিক্ষা, গবেষণা, ব্যবসা-বাণিজ্য সকলক্ষেত্রে তাঁরা সারা বিশ্বে গৌরবের সাথে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর বৈচিত্র্য ও সমানাধিকারের ভিত্তিতে বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। গণমাধ্যম হোক সবার, কেবল নির্দিষ্ট পোশাকধারীদের নয়।
ফারহা খানম
লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।