
একটা সময় ছিল যখন ভিডিও কলিং মানেই ছিল স্কাইপ। সীমান্তের ওপারে থাকা প্রিয়জনের মুখ দেখা কিংবা অফিসের গুরুত্বপূর্ণ মিটিং—সবকিছুর ভরসা ছিল এই একটি অ্যাপ। কিন্তু সময়ের স্রোতে প্রযুক্তি এগিয়েছে বহুদূর। সেই পরিবর্তনের ধাক্কায় দুই দশকের দীর্ঘ পথচলার পর অবশেষে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে স্কাইপের পরিষেবা।
মাইক্রোসফটের ঘোষণা অনুযায়ী, কাল সোমবার (০৫ মে) থেকেই বিশ্বজুড়ে স্কাইপের সমস্ত পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে প্রযুক্তি দুনিয়ার এক সোনালী অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটছে।
২০০৩ সালে স্কাইপের হাত ধরে ভিডিও কলিংয়ের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছিল। অল্প সময়ের মধ্যেই বিশ্বজুড়ে মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই অ্যাপ। সেই সময় ইন্টারনেটের গতি তেমন ভালো না থাকা সত্ত্বেও স্কাইপ তার স্পষ্ট ভিডিও ও ভয়েস কলের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক বিপ্লব এনেছিল।
২০১১ সালে প্রায় ৮.৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে স্কাইপকে কিনে নেয় মাইক্রোসফট। সেই সময় প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ এই অ্যাপ ব্যবহার করতেন। এরপর মাইক্রোসফট একাধিকবার স্কাইপের নকশা পরিবর্তন করে এবং নতুন ফিচার যেমন স্কাইপ ক্লিপস ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর কো-পাইলট যোগ করেও সেই আগের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারেনি।
স্কাইপের এই পতনের প্রধান কারণ ছিল যোগাযোগ প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তন। হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, জুম, গুগল মিটের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো একদিকে যেমন ব্যবহারকারীদের সহজে ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে, তেমনই দ্রুত উন্নত ফিচার এনে স্কাইপকে পিছনে ফেলে দিয়েছে।
অন্যদিকে, মাইক্রোসফটের নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম টিমস এখন কর্পোরেট মিটিং ও অফিসিয়াল যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হিসেবে উঠে এসেছে। ফলে ধীরে ধীরে স্কাইপ তার প্রয়োজনীয়তা হারাতে থাকে। অবশেষে সেই সময়ের ‘প্রযুক্তি আইকন’ বিদায়ের পথে হাঁটতে শুরু করল।
স্কাইপ শুধু একটি অ্যাপ ছিল না, এটি ছিল দূরত্ব কমানোর এক শক্তিশালী মাধ্যম। বিদেশে থাকা প্রিয়জনের সঙ্গে সরাসরি দেখা করা, দূরদর্শনে বসে বন্ধুদের সঙ্গে ভিডিও আড্ডা দেওয়া, আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টদের সঙ্গে ব্যবসার আলোচনা—এক সময় এই সবই স্কাইপের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছিল।
বহু মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে স্কাইপের অজস্র স্মৃতি। তাই এই বিদায় কেবল একটি অ্যাপের সমাপ্তি নয়, বরং প্রযুক্তির এক আবেগপূর্ণ যুগেরও অবসান।
তবে বর্তমান স্কাইপ ব্যবহারকারীদের জন্য মাইক্রোসফট জানিয়েছে চিন্তার কোনো কারণ নেই। তাঁদের সমস্ত চ্যাট, কনট্যাক্ট এবং অন্যান্য ডেটা মাইক্রোসফট টিমস-এ স্থানান্তরের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ব্যবহারকারীরা খুব সহজেই তাদের পুরনো তথ্য সেখানে নিরাপদে সংরক্ষণ করতে পারবেন।
প্রযুক্তির ইতিহাসে কিছু নাম সবসময় উজ্জ্বল হয়ে থাকবে, স্কাইপ তেমনই একটি নাম। প্রায় বাইশ বছরের দীর্ঘ ইতিহাস শেষে এই অ্যাপটি বিদায় নিচ্ছে, রেখে যাচ্ছে ডিজিটাল সংযোগের এক বৈপ্লবিক অধ্যায় এবং অগুনতি মানুষের স্মৃতি।