বৃহস্পতিবার ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বিক্ষোভের মুখে পূর্ব তিমুরে এমপিদের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি কেনা বাতিল

রাইজিং ডেস্ক

Rising Cumilla - East Timor cancels luxury car purchase for MPs amid protests
বিক্ষোভের মুখে পূর্ব তিমুরে এমপিদের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি কেনা বাতিল/ছবি: এএফপি

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ তিমুর-লেস্তে বা পূর্ব তিমুরে সংসদ সদস্যদের জন্য নতুন গাড়ি কেনার সরকারি পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে। রাজধানী দিলিতে হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভের পর সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীরা টায়ার পুড়িয়ে এবং সরকারি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। জনগণের তীব্র প্রতিবাদের মুখে সরকার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।

সরকারের সিদ্ধান্ত বদলের পরও পরদিনও রাস্তায় নামে বিক্ষোভকারীরা। এক বিক্ষোভকারী বিবিসিকে বলেন, অন্তত ২ হাজার মানুষ দিলিতে বিক্ষোভে অংশ নেন। শুরুতে নতুন গাড়ি কেনার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ শুরু হলেও পরে সাবেক এমপিদের জন্য আজীবন ভাতা বাতিলের দাবিও ওঠে।

এক আন্দোলনরত শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে টিয়ার গ্যাসে আঘাত পান। তার অভিযোগ, এমপিরা ‘কাজের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি কিনতে চান, অথচ তাঁদের জনগণ এখনো দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।’

২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, তিমুর-লেস্তের এমপিদের বার্ষিক মূল বেতন ৩৬ হাজার ডলার, যা দেশটির গড় আয়ের দশ গুণেরও বেশি। আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক সেজারিও সিজার বিবিসিকে বলেন, “আমরা তখন বিক্ষোভ শুরু করি, যখন তারা গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এবার মানুষ ফেটে পড়েছে। কারণ মানুষ ক্লান্ত। শিক্ষা, পানি, স্যানিটেশনের মতো মৌলিক সুবিধা নেই, অথচ তারা নিজেদের সুবিধার জন্য আইন বানাচ্ছে। এটা অন্যায়।”

সেজারিও সিজার আরও জানান, এমপিদের বর্তমান গাড়িগুলো এখনো ভালো অবস্থায় আছে, তারপরও নতুন গাড়ি কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার তিমুর-লেস্তের পার্লামেন্টে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয় যে ৬৫ জন এমপির জন্য নতুন টয়োটা প্রাডো এসইউভি কেনা হবে না। কিন্তু খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পরেও বুধবার বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে। ৪২ বছর বয়সী ত্রিনিতো গাইও এএফপিকে বলেন, “গুজব আছে, গাড়িগুলো ইতিমধ্যেই পথে রয়েছে। তাই আমরা সবাই এখানে, যাতে আমাদের ট্যাক্সের টাকা অপচয় না হয়।”

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তিমুর-লেস্তে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে তরুণ জনগোষ্ঠীর দেশ, যেখানে ৭০ শতাংশের বেশি মানুষ ৩৫ বছরের কম বয়সী। কিন্তু এটি এখনো এই অঞ্চলের দরিদ্রতম রাষ্ট্রগুলোর একটি। দেশটির সাবেক মন্ত্রী ফিদেলিস লেইতে মাগালহায়েস বিবিসিকে বলেন, “মানুষ মনে করে প্রতিবাদ গণতন্ত্রের অংশ। দিলিতে জীবন স্বাভাবিকভাবেই চলছে। এটি বড় বিক্ষোভ হলেও মানুষ এখন আর আতঙ্কিত হয় না।”

সাম্প্রতিক সময়ে নেপাল, ইন্দোনেশিয়াসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। নেপালে এক সপ্তাহ আগে জেনারেশন জেড তরুণদের বিক্ষোভে বেশ কয়েকজন নিহত হন। ইন্দোনেশিয়ায় জীবনযাত্রার ব্যয় এবং রাজনৈতিক অভিজাতদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে গত আগস্টে বিক্ষোভ শুরু হয়, যা এক মোটরসাইকেল আরোহী পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় নিহত হওয়ার পর আরও তীব্র রূপ নেয়।

আরও পড়ুন