
বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (বাইউস্ট)-এর আইন বিভাগে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো “অন্তঃবিভাগ আইনী বিতর্ক প্রতিযোগিতা-২০২৫”। প্রতিযোগিতাটি বাইউস্ট ল’ ক্লাবের সার্বিক সহায়তায় সফলভাবে আয়োজন করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলে বিতর্কের তিনটি রাউন্ড, যেখানে আইন বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের মোট ১২টি দল অংশগ্রহণ করে। বিতর্কের প্রস্তাবনা ছিল– “দ্বিতীয়বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হওয়া যাবে না”, “মৃত্যুদণ্ডের বিধান বাতিল”, “এই সংসদ শরণার্থীদের কখনো নাগরিকত্ব দেবে না” প্রভৃতি।
প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় জিসান, দফো এবং আনিকার দল এবং রানার-আপ হয় ইফাদ, আমজাদ ও মুনতাহার দল।
সেরা বিতার্কিক নির্বাচিত হয়েছেন আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইসলামুল হক জিসান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নূর হোসেন, বিএসপি, পিএসসি প্রিলিমিনারি রাউন্ডের ৬টি সেশন সরাসরি পরিদর্শন করেন এবং শিক্ষার্থীদের যুক্তিবান ও চিন্তাশীল বিতর্কের জন্য অনুপ্রেরণা জোগান। তিনি বলেন, “আইনী পেশার অনিবার্য অনুষঙ্গ হচ্ছে বিশ্লেষণ ও যুক্তিনির্ভরতা। এই প্রতিযোগিতা ছাত্রদের বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষতায় সহায়ক হবে।”
অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন ড. মোঃ নায়ীম আলীমুল হায়দার, সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, আইন বিভাগ, বাইউস্ট। তিনি বলেন:
“বিতর্ক মানেই কেবল তর্ক নয়, যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত এক শক্তিশালী বুদ্ধিবৃত্তিক অনুশীলন। বাইউস্ট আইন বিভাগ যুক্তিনির্ভর সমাজ বিনির্মাণে অবদান রাখতে চায়।”
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মু. আবু বকর সিদ্দিক মাসুম, সহকারী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এবং মুস্তাফিজুর রহমান, সহকারী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, আইন বিভাগ, সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। তাঁরা বলেন,
“যুক্তির জোরে তৈরি হতে হবে ভবিষ্যতের নেতৃত্ব। যুক্তিবিন্যাস ও বস্তুনিষ্ঠ চিন্তা একজন বিতার্কিককে করে তোলে সমাজের প্রাজ্ঞ কণ্ঠস্বর।”
আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মো: শামীম আহমেদ, প্রভাষক, আইন বিভাগ। যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন তানজিলা তামান্না ও রাশপিয়াতুর রাশপি, প্রভাষক, আইন বিভাগ।
অনুষ্ঠান বাস্তবায়নে আইন বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ল’ ক্লাবের সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
সভাপতির বক্তব্যে উল্লেখযোগ্যভাবে উঠে আসে বিতর্কের প্রয়োজনীয়তা ও তাৎপর্য:
“যুক্তি + তর্ক = বিতর্ক। তবে জোরের যুক্তি নয়, চাই যুক্তির জোর। যুক্তিসঙ্গত বিতর্ক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্যকে পূর্ণতা দেয়—স্পষ্টতা ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন।”
বিশ্বখ্যাত শিক্ষাবিদ Norman Cousins-এর উক্তি উদ্ধৃত করে বলা হয়:
“The first purpose of education is to enable a person to speak clearly and confidently.”
বিতর্ক সম্পর্কে আলোচনায় উঠে আসে, এটি শুধু প্রতিযোগিতা নয়, বরং মুক্তচিন্তা, গণতন্ত্র ও মানবিক নেতৃত্বের চর্চা। বিতর্ক তরুণদের মধ্যে গড়ে তোলে তথ্যভিত্তিক যুক্তির অনুশীলন এবং সহনশীলতার চর্চা, যা একটি প্রগতিশীল সমাজের জন্য অত্যাবশ্যক।
বক্তারা আরও বলেন,
“একজন বিতার্কিক শুধু সংবাদ পাঠক নয়, হতে হবে সংবাদ বিশ্লেষক। বিতর্কের মঞ্চ থেকেই জন্ম নিতে পারে আগামী দিনের চিন্তানায়ক।”
অন্তঃবিভাগ আইনী বিতর্ক প্রতিযোগিতা-২০২৫ আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছে ছিল এক উদ্দীপনাময় অভিজ্ঞতা। এটি শিক্ষার্থীদের কেবল আত্মবিশ্বাসী বক্তা হয়ে উঠতেই সাহায্য করেনি, বরং তাদেরকে জ্ঞানভিত্তিক, তথ্যসমৃদ্ধ এবং যুক্তিবাদী চিন্তাশীল নাগরিক হওয়ার পথে এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে।
আজকের অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন ল’ ক্লাবের মুনতাহা ও শাকিল।