মে ৬, ২০২৫

মঙ্গলবার ৬ মে, ২০২৫

পাকিস্তানি তরুণীকে বিয়ে, চাকরি হারালেন ভারতীয় সিআরপিএফ কর্মকর্তা

Indian CRPF officer loses job after marrying Pakistani girl
ছবি: সংগৃহীত

প্রেমের টানে কাঁটাতারও হার মেনেছিল। কিন্তু সেই প্রেমই কাল হলো CRPF জওয়ান মুনির আহমেদের জীবনে। পাকিস্তানি তরুণীকে বিয়ে করার পর সেই তথ্য গোপন রাখার অভিযোগে চাকরি খোয়ালেন তিনি।

শনিবার এই বরখাস্তের খবর সামনে আসতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। তবে মুনির আহমেদ জানিয়েছেন, সদর দপ্তরের অনুমতি নিয়েই তিনি বিয়ে করেছিলেন এবং এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হবেন।

জম্মুর ঘারোটা এলাকার বাসিন্দা মুনির আহমেদ ২০১৭ সালে CRPF-এ যোগ দেন। বরখাস্তের খবর পেয়ে তিনি বলেন, “প্রথমে আমি সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারি। পরে CRPF-এর তরফে একটি চিঠি দিয়ে বরখাস্তের কথা জানানো হয়। এটা আমার ও আমার পরিবারের জন্য বড় ধাক্কা। কারণ, আমি পাকিস্তানি নাগরিককে বিয়ে করার জন্য সদর দপ্তরের অনুমতি চেয়েছিলাম এবং সেই অনুমতি পেয়েছিলাম।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমি আদালতে যাব এবং ন্যায়বিচার পাব বলেই আশা রাখি।”

অন্যদিকে, CRPF-এর দাবি, মুনির আহমেদ পাকিস্তানি নাগরিক মিনাল খানকে বিয়ের বিষয়টি গোপন রেখেছেন এবং তার স্বল্পমেয়াদি ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও তাকে নিজের বাড়িতে রেখেছেন। এই কাজ জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে করছে সংস্থাটি।

গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে এক সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর পর ভারত সরকার পাকিস্তানি নাগরিকদের দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেয়। এর পরপরই মুনির আহমেদ ও মিনালের বিয়ের খবর প্রকাশ্যে আসে।

প্রতিবেদনে জানা গেছে, মিনাল খান গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ভারতে আসেন। তার ভিসার মেয়াদ ছিল ২২ মার্চ পর্যন্ত। তবে শেষ মুহূর্তে আদালত তাকে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত করে। বর্তমানে তিনি জম্মুতে তার স্বামীর সঙ্গেই রয়েছেন।

মুনির আহমেদ জানিয়েছেন, ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি প্রথম কর্তৃপক্ষকে পাকিস্তানি নাগরিককে বিয়ে করার ইচ্ছার কথা জানান। তখন তাকে পাসপোর্ট, বিয়ের কার্ড ও হলফনামার প্রতিলিপি জমা দিতে বলা হয়। তিনি বলেন, “আমি আমার নিজের হলফনামা ছাড়াও বাবা-মা, গ্রামের সরপঞ্চ এবং জেলা উন্নয়ন পরিষদের সদস্যদের হলফনামাও যথাযথভাবে জমা দিয়েছিলাম। এরপর ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল সদর দপ্তর থেকে বিয়ের অনুমোদন পাই।”

মুনির আরও জানান, তিনি অনাপত্তিপত্রের জন্য আবেদন করেছিলেন। তবে তাকে জানানো হয় যে এমন কোনো আলাদা নিয়ম নেই এবং সরকারকে জানিয়েই বিদেশি নাগরিককে বিয়ের প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। তিনি বলেন, “২০২৩ সালের ২৪ মে আমরা ভিডিও কলে বিয়ে করি। পরে আমি আমার কর্মস্থল ৭২ ব্যাটালিয়নে বিয়ের ছবি, নিকাহনামা ও বিবাহের শংসাপত্র জমা দিই।”

এই জওয়ান জানান, “২৮ ফেব্রুয়ারি যখন মিনাল ১৫ দিনের ভিসায় প্রথমবার ভারতে আসেন, তখনই আমরা দীর্ঘমেয়াদি ভিসার জন্য আবেদন করি। ইন্টারভিউসহ প্রয়োজনীয় সমস্ত প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে।” তিনি আরও জানান, গত বুধবার আদালত তার স্ত্রীর বহিষ্কারের নির্দেশ স্থগিত করেছে।

ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার পর মুনির আহমেদকে ২৫ মার্চ সুন্দারবানি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে রিপোর্ট করতে বলা হয়। কিন্তু ২৭ মার্চ তার বদলির আদেশ আসে। তিনি অভিযোগ করেন, তাকে সময় না দিয়েই বদলির আদেশ কার্যকর করা হয় এবং সঙ্গে সঙ্গেই তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর ভূপালে নতুন কর্মস্থলে যোগ দেওয়া ছাড়া তার আর কোনো উপায় ছিল না। ২৯ মার্চ তিনি ভূপালে যোগ দেন এবং সেখানে কমান্ডিং অফিসার ও তার সহকারীর কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন।

খবর: এনডিটিভির।

আরও পড়ুন