
সরকারি ১০০ শয্যার লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল এখন ভয়াবহ পরিবেশগত সংকটে ধুঁকছে। ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ রোগী নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, যার সরাসরি শিকার হচ্ছেন চিকিৎসা নিতে আসা অসহায় রোগীরা। বেডের নিচে তেলাপোকার অবাধ বিচরণ, করিডোরে জমে থাকা ময়লার স্তূপ আর তীব্র দুর্গন্ধই এখন এই হাসপাতালের নিত্যদিনের চিত্র। রোগীরা সুস্থ হতে এসে উল্টো আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ তাদের।
রামগঞ্জ থেকে আসা হারুনুর রশিদ নামে এক রোগীর স্বজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “একজন রোগী সুস্থ হতে আসবে, কিন্তু এখানে এসে আরও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। বাথরুমে ঢোকা যায় না। ভেতরে পানি নেই, গন্ধে থাকা যায় না।” এমন অভিযোগ শুধু তার একার নয়, প্রতিদিন শত শত রোগী ও তাদের স্বজনের মুখে একই আক্ষেপ শোনা যাচ্ছে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত শৌচাগার না থাকা এবং যা আছে, সেগুলোর অবস্থাও ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
হাসপাতালের পুরোনো ভবনে জায়গার সংকট প্রকট। রোগীর অত্যাধিক চাপ থাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ ঠিকভাবে হচ্ছে না বলে জানান কয়েকজন কর্মচারী। ভেতরের ফ্লোর, দেয়াল কিংবা জানালার পাশে জমে থাকে ধুলা ও ময়লা। কিছু জায়গায় ফ্যান অচল, শয্যা ভাঙা, জানালার কাঁচ নেই – এসব সমস্যায় রোগীরা মারাত্মক কষ্ট পাচ্ছেন।
এদিকে, হাসপাতালের নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হলেও সেটি এখনো চালু হয়নি। ফলে পুরোনো ভবনেই একাধিক ওয়ার্ডের রোগীদের গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। রোগীরা আশাবাদী, নতুন ভবন চালু হলে অন্তত জায়গার কষ্ট কিছুটা কমবে। তবে সেটির উদ্বোধন কবে হবে, সে বিষয়ে কেউ নিশ্চিত নন।
এছাড়াও, হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটও প্রকট। বিশেষ করে রাতে ও ছুটির দিনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নার্স জানান, “রোগী অনেক, পরিষ্কার করার লোক কম। আমাদের পক্ষে সব সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মাদ আবু হাসান শাহীন বলেন, “পরিচ্ছন্নতা ও জনবল সংকটের বিষয়টি আমরা জানি। নতুন ভবনের জন্য অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। চালু হলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে।”
তবে রোগীদের প্রশ্ন, ততদিন কী হবে? দুর্গন্ধ, তেলাপোকা আর ময়লার ভেতরেই কি চলবে তাদের চিকিৎসা?