শনিবার ২ আগস্ট, ২০২৫

নতুন হারে আরও ৬৯ দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপ

ছবি: রয়টার্স

আবারও প্রায় ৬৯টি বাণিজ্যিক অংশীদারের ওপর ১০ থেকে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত পাল্টা শুল্কারোপের ঘোষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী সপ্তাহে এই শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) এই শুল্ক ঘোষণা করেন ট্রাম্প।

এর আগে, গত এপ্রিলে বাণিজ্য ঘাটতি মেটাতে বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্কারোপ করেছিলেন ট্রাম্প। পরে তা তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। সে সময় শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্ন দেশকে আলোচনার সুযোগও দেয় ওয়াশিংটন।

বৃহস্পতিবার ‘সংশোধিত পাল্টা শুল্ক হার’ (Further Modifying the Reciprocal Tariff Rates) শিরোনামে প্রায় ৬৯টি বাণিজ্য অংশীদার দেশের নাম ও তাদের জন্য নির্ধারিত সংশোধিত শুল্কহারের তালিকা ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

দেশটির সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের ওপর সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ হারে ভিত্তিমূল শুল্ক ধার্য করা হয়েছে। বাকি দেশগুলোর ওপর ১৫ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি হারে শুল্কারোপ করা হয়েছে।

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে অংশীদারদের সঙ্গে পারস্পরিক ঘাটতি মেটাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, নির্বাহী আদেশ ১৪২৫৭-এ ঘোষিত জাতীয় জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় নির্দিষ্ট কিছু বাণিজ্য অংশীদার দেশের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত অ্যাড ভ্যালোরেম (মূল্যভিত্তিক) শুল্ক আরোপ করা প্রয়োজন ও যৌক্তিক।’

এদিকে, কানাডার সঙ্গে ২৫ শতাংশ শুল্ক সমঝোতা হওয়ার পরও নতুন করে তা বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করা হবে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন। কানাডা থেকে ফেন্টানিলসহ অন্যান্য মাদক যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ঠেকাতে কানাডার ব্যর্থতার কারণ হিসেবে নতুন করে এই শুল্কহার ঘোষণা করা হয়েছে বলে নির্বাহী আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

কানাডার ওপর আরোপিত এই শুল্ক আজ (১ আগস্ট) থেকেই কার্যকর হবে এবং বাকি দেশগুলোর ওপর ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রত্যাশা বনাম ফলাফল

গত এপ্রিলে শুল্ক ধার্যের পর অনেক দেশই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে শুল্কের পরিমাণ নিয়েও দ্বিমত রয়েছে অনেকের।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক হিনরিচ ফাউন্ডেশনের বাণিজ্য নীতিবিষয়ক প্রধান ডেবোরা এলমস আল জাজিরাকে বলেন, ‘এই শুল্ক আরোপের ঘোষণা এসেছে সর্বশেষ সময়সীমার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে।’

তবে নতুন এই শুল্কহার ‘অস্বাভাবিক হিসাবের’ ওপর ভিত্তি করে করার হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

তার ভাষ্যে, আগের শুল্ক নির্ধারণের পদ্ধতিটা হয়তো বাজে ছিল, কিন্তু অন্তত একটা যুক্তি ছিল। নতুন শুল্কহার বাস্তবতার সঙ্গে একদম খাপ খায় না। কিছু দেশ কঠিন দরকষাকষি করেও ভালো ফল পেয়েছে, কেউ কেউ পায়নি। আবার কেউ আলোচনার সুযোগ না পেয়েও কম শুল্ক পেয়েছে, আবার কিছু দেশের ক্ষেত্রে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে।

কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের ট্রেড পলিসি ফেলো ইনু মানাক বলেন, নতুন হারে শুল্ক কার্যকর হতে সাত দিন সময় লাগবে। এই সময়ে যেসব দেশ আগেই আলোচনা শুরু করেছিল, তারা চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য বাড়তি সময় পেয়েছে।

কীভাবে নির্ধারিত হলো এই শুল্কহার

নতুন করে ঘোষিত এই শুল্কে যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে, এমন বেশিরভাগ দেশের ওপরই সর্বজনীন ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

তবে যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, তাদের ওপরই আরোপিত এই শুল্কহারে মূলত পরিবর্তন এসেছে। ওই দেশগুলোর ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভিত্তিমূল শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। যদিও ট্রাম্পের সঙ্গে কোনো চুক্তি হওয়া সাপেক্ষে এবং ওই দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় শুল্কহারে দেশভেদে তারতম্য দেখা গেছে।

এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে শুল্ক চুক্তির ঘোষণা দিয়েছিল হোয়াইট হাউস। তাছাড়া সেমিকন্ডাক্টর, মোটরযান, গাড়ির যন্ত্রাংশ, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ও রপ্তানি পণ্যের জন্য পৃথক শুল্ক নির্ধারণ করা হচ্ছে।

যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, তাদের বেশিরভাগের জন্যই শুল্কহার কিছুটা কমানো হয়েছে, যদিও কিছু ক্ষেত্রে বিস্ময়কর সিদ্ধান্তও দেখা গেছে।

তাইওয়ানের প্রাথমিক শুল্কহার ৩২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে, যেখানে প্রতিবেশী জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার চুক্তির তুলনায় এই হার এখনো বেশি।

আবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও ভারতের জন্য ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের জন্য শুল্ক ২৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৯ শতাংশ করা হয়েছে।

তবে সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো, সুইজারল্যান্ডের শুল্কহার ৩১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৯ শতাংশ করা হয়েছে। আবার যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার জন্য ৪১ শতাংশ এবং মিয়ানমারের জন্য ৪০ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণও বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে।

অন্যান্য উল্লেখযোগ্য শুল্কহারগুলোর মধ্যে রয়েছে— লাওসের জন্য ৪০ শতাংশ, ইরাক ও সার্বিয়ার জন্য ৩৫ শতাংশ এবং আলজেরিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, লিবিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য ৩০ শতাংশ।

এ ছাড়া শ্রীলঙ্কার ওপর ২০ শতাংশ, বাংলাদেশের ওপর ২০ শতাংশ, ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ, কম্বোডিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ ও পাকিস্তানের ওপর ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসন বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দেশভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণ করে মনে করেন সিঙ্গাপুরভিত্তিক এপ্যাক অ্যাডভাইজর্সের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী স্টিভ ওকুন।

তার মতে, প্রতিটি দেশের জন্য নির্ধারিত শুল্কহারের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সামগ্রিক বা নির্দিষ্ট তত্ত্ব নেই। বাণিজ্য-সংক্রান্ত হোক বা অন্য যেকোনো কারণে, দেশগুলোর ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্টের মনোভাবের ওপর ভিত্তি করেই আলাদা শুল্ক নির্ধারিত হয়।

আরও পড়ুন