শুক্রবার ১৮ জুলাই, ২০২৫

চৌদ্দগ্রামে ১৫ বছর বয়সী কিশোরীর বাল্যবিবাহ করে মেয়ের মা’কে অর্থদণ্ড

Child marriage of 15-year-old girl stopped in Chauddagram, mother fined

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এক ১৫ বছর বয়সী কিশোরীর বাল্যবিবাহ বন্ধ করা হয়েছে এবং একই সাথে মেয়ের মাকে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। 

আজ শুক্রবার (১৮ জুলাই) মুন্সিরহাট ইউনিয়নের বৈলপুর গ্রামে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট জাকিয়া সরওয়ার লিমা। তাকে সহযোগিতা করেন চৌদ্দগ্রাম উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা এবং চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশের একটি দল।

জানা গেছে, মুন্সিরহাট ইউনিয়নের বৈলপুর গ্রামের আমিনুল হকের ১৫ বছর বয়সী কন্যা সানজিদা আক্তারের (জন্ম: ৩১/০৫/২০১০) বাল্যবিবাহের আয়োজন করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী পুরুষের ২১ এবং নারীর ১৮ বছর বয়স না হলে বিবাহ সম্পন্ন করা যায় না।

অভিযানে সানজিদা আক্তারের মা আয়েশা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি দাবি করেন যে তার মেয়ের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে। জন্মসনদ, এনআইডি বা শিক্ষাগত সনদ দেখতে চাইলে তিনি একটি নোটারী পাবলিকের ডকুমেন্ট উপস্থাপন করেন, যেখানে সানজিদা আক্তারের জন্ম তারিখ ৩১/০৫/২০০৬ উল্লেখ করা হয় এবং জানানো হয় যে জন্মসনদ এখনও করা হয়নি।

তবে, ম্যাজিস্ট্রেট কনেকে দেখে তার বয়স নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। পরিবারের তথ্য গোপনের বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি অত্যন্ত কৌশলে সানজিদা আক্তারের আসল জন্মসনদ উদঘাটন করেন। জন্মসনদ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তার প্রকৃত জন্ম তারিখ ৩১/০৫/২০১০।

এতে স্পষ্ট হয় যে, কুমিল্লা নোটারী পাবলিক জন্মসনদে সঠিক বয়স উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও অপ্রাপ্তবয়স্ক এই কন্যার বয়স গোপন করে ভুয়া তথ্য দিয়ে বিবাহের কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন। এটি বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ এর একটি গুরুতর লঙ্ঘন।

আইন অমান্য করে এবং নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে বয়স গোপন করে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের বাল্যবিবাহ সম্পাদন বা পরিচালনার অপরাধে সানজিদা আক্তারের মা আয়েশা বেগমকে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ এর বিধান অনুযায়ী ২৫,০০০/- (পঁচিশ হাজার) টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। অনাদায়ে তাকে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হতো।

তবে, তাৎক্ষণিকভাবে দণ্ডিত অর্থ আদায় করা হয় এবং সানজিদা আক্তার ও তার মা আয়েশা বেগমের যৌথ স্বাক্ষরে ভবিষ্যতে বাল্যবিবাহের সাথে সংশ্লিষ্ট হবেন না মর্মে মুচলেকা গ্রহণ করা হয়। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বাল্যবিবাহটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এই ঘটনাটি পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে (যা স্থানীয়ভাবে ‘কোর্ট ম্যারেজ’ নামে পরিচিত) অনেক বাল্যবিবাহ সম্পন্ন হচ্ছে। নোটারী পাবলিকের দেওয়া ভুয়া বয়সের প্রত্যয়নপত্র রাষ্ট্রের ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭’ এর যথাযথ বাস্তবায়নের অন্তরায়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার বাল্যবিবাহসহ সকল অপরাধ দমনে রাষ্ট্রের আইন, কানুন ও বিধি সঠিকভাবে প্রতিপালনে সংশ্লিষ্ট সকলের সার্বিক সহযোগিতা এবং দায়িত্বশীল আচরণ ও মনোভাব কামনা করেছেন।

আরও পড়ুন