মঙ্গলবার ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

চান্দিনা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ: কারণ ও প্রতিকার

ওসমান গনি, চান্দিনা প্রতিনিধি

Rising Cumilla - Native fish species disappearing from Chandina-Causes and remedies
চান্দিনা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ: কারণ ও প্রতিকার/ছবি: সংগৃহীত

একসময় কুমিল্লার চান্দিনার খাল, বিল ও পুকুরগুলো দেশীয় মাছের অফুরন্ত ভাণ্ডার ছিল। রুই, কাতলা, মৃগেল, শিং, মাগুর, কই, টাকি, পুঁটি, মলা, ঢেলা, বাইন, শোল, গজার, চিতল, পাবদা, টেংরাসহ অসংখ্য প্রজাতির মাছে ভরপুর ছিল এখানকার জলাশয়গুলো। কিন্তু এখন সেই চিত্র অনেকটাই পাল্টে গেছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। চান্দিনার ঐতিহ্যবাহী এই সম্পদ বিলুপ্তির পথে, যা শুধু মৎস্যজীবীদেরই নয়, স্থানীয় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্যও এক বড় হুমকি।

দেশীয় প্রজাতির মাছের এই করুণ দশার পেছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি কারণ। এর মধ্যে অন্যতম হলো অপরিকল্পিত মাছ চাষ ও বিদেশি প্রজাতির আগ্রাসন। স্থানীয় পুকুরগুলোতে বিদেশি জাতের মাছ, যেমন তেলাপিয়া, পাঙ্গাস ও আফ্রিকান মাগুর ব্যাপক হারে চাষ করা হচ্ছে। এই মাছগুলো দেশীয় মাছের খাদ্য ও বাসস্থান দখল করে নেয়, এমনকি তাদের ডিম ও পোনা খেয়ে ফেলে। ফলে দেশীয় মাছ বংশবিস্তার করতে পারছে না।

এছাড়াও, ফসলি জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার আরেকটি প্রধান কারণ। বৃষ্টির পানির সঙ্গে এই বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মিশে নদী-নালা ও খাল-বিলে প্রবেশ করে, যা মাছের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট করে এবং অনেক ক্ষেত্রে তাদের মৃত্যুর কারণ হয়।

জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক জলাশয় ভরাটও মাছের বিলুপ্তিতে ভূমিকা রাখছে। বর্ষার সময় পানি আটকে রাখার মতো বিল বা ছোট ছোট খাল না থাকায় দেশীয় মাছের প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র নষ্ট হচ্ছে। অনেক জলাশয় প্রভাবশালী মহলের দখলে চলে যাচ্ছে বা ভরাট করে সেখানে ঘরবাড়ি ও অন্যান্য স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে।

দেশীয় মাছ রক্ষা করতে হলে জরুরি ভিত্তিতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে দেশীয় মাছের পোনা অবমুক্তকরণ একটি কার্যকর উপায় হতে পারে। যেসব প্রাকৃতিক জলাশয় এখনো টিকে আছে, সেগুলোকে মাছের জন্য উপযোগী করে তুলতে হবে।

মাছ চাষে নীতি পরিবর্তন আনাও জরুরি। বিদেশি মাছের পরিবর্তে দেশীয় প্রজাতির মাছের বাণিজ্যিক চাষে মৎস্যচাষিদের উৎসাহিত করতে হবে। একই সাথে, ফসলি জমিতে কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। স্থানীয় প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ এবং পরিবেশবিদদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় চান্দিনার ঐতিহ্যবাহী দেশীয় মাছকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। না হলে অদূর ভবিষ্যতে নতুন প্রজন্ম কেবল বইয়েই দেশীয় মাছের নাম দেখতে পাবে।

আরও পড়ুন