মঙ্গলবার ২৯ জুলাই, ২০২৫

চাঁদপুরে এইচআইভি পরীক্ষা: গত ৫ বছরে ৬৪২৭ জনের স্ক্রিনিং, ২৫ জন শনাক্ত

ছবি: সংগৃহীত

চাঁদপুরের আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে বিনামূল্যে এইচআইভি রক্ত পরীক্ষার সুবিধা চালু রয়েছে। গত ৫ বছরে এই হাসপাতালের এইচটিসি এআরটি সেন্টার থেকে মোট ৬ হাজার ৪২৭ জনের রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে, যার মধ্যে ২৫ জনের শরীরে এইচআইভি পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ১৫ জন পুরুষ এবং ১০ জন নারী রয়েছেন। চিকিৎসকরা এই কঠিন রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় সবাইকে বিনামূল্যে এই সেবা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে সারা দেশের ২২টি জেলার পাশাপাশি চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালেও এইচআইভি রক্ত পরীক্ষা ও পরামর্শ সেবা চালু হয়। শুরুর দিকে প্রতিদিন গড়ে ৭-৮ জন এই সেবা গ্রহণ করলেও, বর্তমানে প্রতিদিন ১০-১২ জনেরও বেশি মানুষ এই সেন্টারে এসে পরীক্ষা করাচ্ছেন।

এই সেন্টারে আসা ব্যক্তিদের মুখের লালা ও রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যেই রিপোর্ট দেওয়া হয়। চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের নিচতলায় অবস্থিত এই সেবা কেন্দ্রে বর্তমানে তিনজন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত আছেন। হাসপাতালের দুজন আবাসিক চিকিৎসক ফোকাল পার্সন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের সঙ্গে রয়েছেন কাউন্সিলর কাম-অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হাবিবুল হক আখন্দ এবং মেডিকেল টেকনোলজিস্ট সোলেমান হোসেন।

তারা জানান, বিনামূল্যে এই রক্ত পরীক্ষা সেবা চালুর পর থেকে জেলার অনেক মানুষ উপকৃত হয়েছেন। এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৪২৭টি পরীক্ষা করা হয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ২৫ জন রোগী পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন।

দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেন, বিশেষ করে বিদেশগামী শ্রমিকদের জন্য এই পরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি, কারণ অনেক দেশে বিদেশ ভ্রমণের আগে এইচআইভি পরীক্ষার রিপোর্ট বাধ্যতামূলক। এছাড়াও, মাদকাসক্ত এবং যৌনকর্মীদের জন্যও এই পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা ঝুঁকিপূর্ণ এই জনগোষ্ঠীকে হাসপাতালে এসে বিনামূল্যে এই সহজ সেবা গ্রহণ করে নিজেদের এবং সমাজের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

সেন্টারে আসা প্রতিটি সেবাপ্রার্থীর জন্য আলাদা ফাইল খোলা হয় এবং বিস্তারিত কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করা হয়, যাতে রোগী রোগ সম্পর্কে সচেতন ও সতর্ক হতে পারেন। রিপোর্ট পজিটিভ এলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়। নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়া ব্যক্তিদেরও ভবিষ্যতে ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়।

চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের রেসিডেন্ট ফিজিশিয়ান (আরপি) ডা. মোহাম্মদ আসিফ ইকবাল বলেন, “এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধে আমাদের অনেক কিছু করণীয় আছে। এর মধ্যে রয়েছে – নিয়মিত প্রাথমিক পরীক্ষা, বিদেশগামী শ্রমিকদের এইচআইভি টেস্ট, ঝুঁকিপূর্ণ যৌন আচরণ থেকে বিরত থাকা, সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই পরীক্ষার মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকা এবং গর্ভবতী মায়েদের এইচআইভি পরীক্ষা করা। একমাত্র সচেতনতাই পারে এই রোগের ঝুঁকি কমাতে।”

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. একেএম মাহাবুবুর রহমান বলেন, “এইচটিসি এআরটি সেন্টারের মাধ্যমে এ পর্যন্ত যারা সেবা নিয়েছে, তাদের মধ্যে ২৫ জন এইচআইভি পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছে। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে এই বিনামূল্যের সেবার আওতায় নিয়ে আসা, যাতে তারা সময়মতো পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে পারেন।”

উল্লেখ্য, যে জীবাণুর মাধ্যমে এইডস রোগ হয়, তাকে এইচআইভি (HIV) বলা হয়।

আরও পড়ুন