কে হচ্ছেন কুমিল্লা সিটির নতুন মেয়র তা নির্ধারণ হবে কাল। শনিবার (৯ মার্চ) কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের (কুসিক) মেয়র পদে উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। কুমিল্লা নগরীর ২ লাখ ৪২ হাজার ৪৫৮ ভোটার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে তাঁদের পছন্দের মেয়র নির্বাচিত করবেন।
এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে পুরো কুমিল্লা নগরীতে নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। ইতিমধ্যেই কুমিল্লা জিল্লা স্কুল থেকে ইভিএমসহ নির্বাচনী সরঞ্জামাদী কেন্দ্রে-কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে। শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ১০৫ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে।
উপনির্বাচনে লড়ছেন যারা-
এবার কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন উপ-নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চার জন। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের দুইবারের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসিন বাহার সূচনা, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম, কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার।
কে কোন প্রতীক থেকে লড়াই করছেন?
নিজামুদ্দিন কায়সার ঘোড়া প্রতীকে, ডাক্তার তাহসিন বাহার সূচনা বাস প্রতীকে, মনিরুল হক সাক্কু টেবিল ঘড়ি প্রতীকে এবং নুর উর রহমান মাহমুদ তানিম হাতি প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
এদিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নগরীর ৫৩ দশমিক ৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা ঢেকে দেয়া হয়েছে নিরাপত্তার চাদরে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা সিটিতে নির্বাচন উপলক্ষ্যে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স ভোট গ্রহনের আগের দুই দিন, ভোটের দিন এবং পরে একদিন মোতায়েন থাকবে। ২৭ টি ওয়ার্ডে ১০৫ কেন্দ্রের জন্য প্রতি ওয়ার্ডে ১ টি করে ২৭ টি পুলিশের মোবাইল ফোর্স, প্রতি ৩ ওয়ার্ডে ১ টি করে ৯ টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, ২ টি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং, র্যাবের ২৭ টি টীম এবং ১২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এছাড়া প্রতি কেন্দ্রে ৪ জন অস্ত্রসহ পুলিশ, ২ জন অস্ত্রসহ আনসার ও ১০ জন লাঠিসহ নারী ও পুরুষ আনসার ভিডিপি সদস্য থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রের জন্য ১ জন বেশী অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্যা বেশি থাকবে। অর্থাৎ সাধারণ ভোট কেন্দ্রে ১৬ জন ও গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে ১৭ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকার নির্দেশনা রয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরহাদ হোসেন জানান, প্রতিটি কেন্দ্রকেই গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয়েছে- সে হিসেবে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী মোতায়েন হবে। অন্তত ২৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। প্রশাসন চাইলে আরো বেশি সদস্য মোতায়েন করতে পারেন। তবে আমরা চাই সুশৃঙ্খল নির্বিঘ্নে নির্বাচন। এজন্য নির্বাচন কমিশনের সকল নির্দেশনা মানা হবে।
এর আগে প্রচারনার সময় টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু সাংবাদিকদের জানান, আমাদের কাছে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয় এমন কেন্দ্রের তালিকা রিটার্নিং অফিসারকে দিয়েছি। আশা করি সেগুলো আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হাতি প্রতীকের প্রার্থী নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম সাংবাদিকদের জানান, কুমিল্লার মানুষ একজনের আধিপত্য পছন্দ করছে না আর, মানুষ পরিবর্তনে বিশ্বাসী, ইনশাল্লাহ জয়ের ব্যাপারের শতভাগ আত্মবিশ্বাসী আমি ।
বাস প্রতীকের প্রার্থী তাহসিন বাহার সূচনা সাংবাদিকদের জানান, সিটি কর্পোরেশনে নানা সমস্যা আছে, আমি নির্বাচিত হলেই এইগুলো সমাধান করবো। কুমিল্লার মানুষ আমার বাবাকে ভালোবাসেন। বাবা সব সময় এই কুমিল্লার মানুষের জন্য কাজ করেছেন,কুমিল্লার আওয়ামী লীগ আজ ঐক্যবদ্ধ, শনিবার বিশাল ব্যবধানে বাস প্রতীকের জয় হবে।
ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার সাংবাদিকদের জানান, আমি চাই সব ক`টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে গুরুত্ব দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হোক। ভোট লুট কিংবা ভোটাররা কেন্দ্রে আসতে বাঁধা বিপত্তি যেন না হয় সে জন্য দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।
আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কুমিল্লা সিটিতে মোট ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি কক্ষে ভোট নেয়া হবে। মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪২ হাজার ৪৫৮। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ২৪ হাজার ২৭৪ এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১৮ হাজার ১৮২ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন দুইজন। পুরুষের চেয়ে নারী ভোটার ৬ হাজার ৯২ জন বেশি।
এর আগে গত নির্বাচনে কুমিল্লা সিটিতে ২০২২ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত তৃতীয় নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন। হিজড়া ভোটার দুজন।
মূলত, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের (কুসিক) এ উপনির্বাচন হবে টেবিল ঘড়ি, বাস, হাতি ও ঘোড়া প্রতীকের মধ্যেই প্রতিদ্বন্ধীতামূলক লড়াই। আর এ লড়াইয়ে যিনি এগিয়ে যাবেন তিনিই হবেন আগামি সাড়ে তিন বছরের জন্য কুসিকের নতুন মেয়র।
প্রঙ্গত, ২০২২ সালের ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন। ওই বছরের ৭ জুলাই রিফাত মেয়রের দায়িত্ব নেন। গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরফানুল হক রিফাতের মৃত্যু হয়। এরপর ১৮ ডিসেম্বর মেয়রের পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়। গত ২২ জানুয়ারি মেয়র পদে উপনির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।