কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ সবার বাড়ি যাওয়ার একনিষ্ঠ তাড়াহুড়ো। শুধু তাড়া নেই একদল সদস্যের।
সকল শিক্ষার্থীর কাছে তারা মামা নামেই অধিক পরিচিত। ‘দায়িত্বের কাছে পৃথিবীর সবকিছু হার মানে’ এ রকম বহুল প্রচলিত একটি প্রথা আছে আমাদের সমাজে। এই প্রথার বাস্তবিক চিত্র খুঁজে পাওয়া গেল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের মাঝে।
বরাবরের মতোই এবারও মুসলমানদের অন্যতম উৎসব পবিত্র ঈদ-উল-আযহায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) প্লাটুনের ৩৯ আনসার সদস্য পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করতে পারছেন না।
আজ রাত পোহালেই আগামীকাল সোমবার (১৭ জুন) পুরো দেশব্যাপী উদযাপিত হবে মুলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ-উল-আযহা। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে কার না ঈদ উদযাপন করতে ভালো লাগে। কিন্তু ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় তা হয়ে উঠে না।
এতে মনে ক্ষণস্থায়ী দুঃখ-কষ্টের জন্ম দিলেও পরিবারের সবার সুখের কথা বিবেচনা করে নিজেদের মনের ইচ্ছাকে কোরবানি করেন কিংবা কোরবানি করে চলেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) আনসার সদস্যরা।
গত বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) এবার ঈদে গ্রামের বাড়ি যেতে পারছেন না এরকম ডজন খানেক আনসার সদস্যের সাথে কথা হয় রাইজিং কুমিল্লা’র প্রতিবেদকের ।
তাদেরই কয়েকজন আনসার সদস্য হবিগঞ্জের শাহাবুদ্দিন চৌধুরী সোহাগ, বরগুনার মাহবুব মিয়া, ময়মনসিংহের আশরাফুল ইসলাম, গাইবান্ধার আব্দুল হাই প্রধান।
তাদের ভাষ্য, প্রতিমাস অন্তর চার-পাঁচদিন ছুটি পেয়ে থাকেন তারা। কিন্তু এই ঈদে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য মন চাইলেও সবাই পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করতে পারছেন না। এতে তাদের সাময়িক মনঃক্ষুণ্ন হয়। তবে পরিবারের কথা বিবেচনা করে মানিয়ে নিচ্ছেন তারা।
ওই দিন দুপুরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) প্রধান ফটকে দায়িত্ব পালন করছিলেন সাতক্ষীরার মোহাম্মদ ইকবাল। বেশ কিছুক্ষণ কথা হয় তার সাথে।
তিনি জানান, গত মার্চে তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) আনসার প্লাটুনে যোগ দিয়েছেন। বিয়ে করেনি এখনো পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। অন্যান্য সময় মা-বাবার কথা মনে পড়লেও ঈদে একটু বেশিই তাদের কথা মনে পড়ে। কিন্তু ঈদের আগে তিনি বাড়ি যেতে পারছেন না। ঈদের পর অন্য আনসার সদস্য যারা ছুটিতে গেছেন তারা প্লাটুনে আসলে তিনি বাড়ি যাবেন।
অতীতের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, চাকুরিতে যোগদানের আগে কতই না মধুময় ছিল প্রতিটি ঈদ। ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব,পাড়া প্রতিবেশি, আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে ঈদে প্রচুর আনন্দ করতাম। কিন্তু এখন তা আর হয়ে উঠে না। মাঝে মাঝে ওইসব স্মৃতি মনে পড়লে চাকুরি ছেড়ে চলে যেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু পরিবারের বড় সন্তান বলে তা করতে পারিনা। দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে পরিবারের হাল ধরে রাখছি।
আরেকজন আনসার সদস্য গাইবান্ধার মিজান। তিনি গত বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের বি-ব্লকে ( নতুন ব্লক) দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনিও পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করতে পারছেন বলে জানান।
তবে এর আগের ঈদ পরিবার তথা সন্তান,মা-বাবা, আত্মীয় স্বজনদের সাথে উদযাপন করেছেন।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) প্লাটুন কমান্ডার রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন,’৪৯ জন আনসার সদস্যের মধ্যে ১০ জন এই ঈদে ছুটিতে আছে। আমরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তায় সর্বদা প্রস্তুত। আমরা চাই না বিশ্ববিদ্যালয় কোন অপ্রতিকর ঘটনা না ঘটুক।’