মে ৪, ২০২৫

রবিবার ৪ মে, ২০২৫

কুমিল্লা ও রাজশাহীতে বাড়ছে ছোঁয়াচে ‘স্ক্যাবিস’ রোগের সংক্রমণ

প্রতীকী ছবি/সংগৃহীত

কুমিল্লা ও রাজশাহী জেলায় সম্প্রতি ভয়াবহভাবে বেড়েছে খোসপাঁচড়া বা ‘স্ক্যাবিস’ নামক একটি ছোঁয়াচে চর্মরোগের সংক্রমণ। হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন শত শত মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন। সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী শিশু ও কিশোররা।

চিকিৎসকদের ভাষায়, এই রোগটি সাধারণ ‘খোসপাঁচড়া’র মতো মনে হলেও এটি অনেক বেশি সংক্রামক, জটিল এবং চিকিৎসার অভাবে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

কী এই খোসপাঁচড়া বা স্ক্যাবিস?

স্ক্যাবিস হলো এক ধরনের ছোঁয়াচে চর্মরোগ, যা ‘সারকোপ্টস স্ক্যাবি’ নামের ক্ষুদ্র মাইট বা পরজীবীর মাধ্যমে ছড়ায়। এরা ত্বকের নিচে গর্ত করে ডিম পাড়ে, ফলে তীব্র চুলকানি, ফুসকুড়ি ও ইনফেকশন দেখা দেয়।

স্ক্যাবিসের উপসর্গ:

০১. তীব্র চুলকানি (বিশেষ করে রাতে)

০২. আঙুলের ফাঁকে, কনুই, কবজি, কোমর ও নাভির চারপাশে লাল ফুসকুড়ি বা দানা

০৩. ছোট ছোট দাগ, ফোস্কা ও ঘা

০৪. শিশুদের ক্ষেত্রে মুখ, মাথা ও পায়ের পাতায়ও লক্ষণ দেখা দিতে পারে

কুমিল্লা: শিশুদের মধ্যে ভয়াবহ সংক্রমণ

মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন গড়ে ২০০-২৫০ জন রোগী স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন, বলছেন চিকিৎসকরা। শিশুদের মধ্যে আক্রান্তের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেশি।

শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘শূন্য থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশু রোগীদের প্রায় ৪০-৫০ শতাংশই স্ক্যাবিসে আক্রান্ত।’

এ অবস্থাকে ‘সতর্ক সংকেত’ হিসেবে দেখছেন তিনি।

রাজশাহীতেও সংক্রমণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আক্রান্ত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রতিদিন গড়ে ৩০-৩৫ জন শিক্ষার্থী স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হয়ে আসছেন। শুধু শিক্ষার্থী নয়, শহরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে রোগটি।

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মাশিউল আলম হোসেন বলেন, ‘আগে দিনে গড়ে ১-২ জন রোগী পেতাম, এখন সেটা বেড়ে ৫-৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এটা শুধু রাজশাহী বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা নয়, পুরো দেশের একটি স্বাস্থ্যঝুঁকি।’

কীভাবে ছড়ায় এই রোগ?

০১. একজন আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বকের সংস্পর্শে এলেই ছড়ায়

০২. বিছানা, কাপড়, তোয়ালে, বালিশের কভার থেকেও ছড়াতে পারে

০৩. আক্রান্ত শিশুর সঙ্গে খেলার মাধ্যমে অন্য শিশুও সংক্রমিত হতে পারে

০৪. এক বাসায় থাকা সদস্যদের মধ্যে দ্রুত ছড়ায়

Scabies
ছবি: ফ্রিপিক

প্রতিকার ও প্রতিরোধ:

প্রাথমিক চিকিৎসা:

০১. স্ক্যাবিস প্রতিরোধে পারমেথ্রিন নামক ওষুধযুক্ত ক্রিম বা লোশন ব্যবহৃত হয়

০২. মুখে খাওয়ার জন্য আইভারমেকটিন জাতীয় ওষুধও প্রয়োগ করা হয় কিছু ক্ষেত্রে

৩. একসঙ্গে পরিবারের সবাইকে চিকিৎসা দেওয়া জরুরি, শুধু একজনকে চিকিৎসা দিলেই সংক্রমণ আবার ফিরে আসতে পারে

কী করণীয়:

০১. আক্রান্ত ব্যক্তিকে অন্যদের থেকে আলাদা রাখা

০২. ব্যবহার করা বিছানাপত্র, জামাকাপড়, তোয়ালে গরম পানিতে ধুয়ে রোদে শুকানো

০৩. নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা

০৪. শিশুর ত্বকে অস্বাভাবিক লালচে দাগ বা চুলকানি দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা

চিকিৎসকের সতর্কতা: জটিলতা হতে পারে কিডনিতেও

চিকিৎসকদের মতে, সঠিক চিকিৎসা না হলে স্ক্যাবিসের কারণে সেকেন্ডারি ইনফেকশন বা ত্বকে ঘা থেকে কিডনি জটিলতা পর্যন্ত দেখা দিতে পারে। তাই একে খোসপাঁচড়া ভেবে অবহেলা না করে প্রথমেই সঠিক চিকিৎসা নেওয়া উচিত।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

আরও পড়ুন