
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি’র (কুবিসাস) বার্ষিক বিশেষ সাময়িকী ‘রক্তিম জুলাই’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। শুক্রবার (০৮ আগস্ট) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (কুবিসাস’র) দপ্তর সম্পাদক চৌধুরী মাসাবিহ’র সঞ্চালনায় ও কুবিসাস’র সভাপতি সাঈদ হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিনিধি মানছুর আলম অন্তর।
এছাড়া অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান। প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ’র (পিআইবি) মহাপরিচালক ফারুখ ওয়াসিফ প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন । এসময় চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুথানে আহত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আহত সাংবাদিকের বক্তব্যে মো. শাহিন আলম বলেন, প্রথমে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি যারা জুলাই বিপ্লবে আহত হয়েছেন এবং পঙ্গুত্ত্ব বরণ করেছেন, বিশেষ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ আব্দুল কাইয়ুম কে। আমি আজ এখানে দাঁড়িয়ে আছি একজন পেশাদারী হিসেবে নয়, বরং জুলাই অভ্যুত্থানের একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে। ১১ জুলাই আমরা দেখেছি পুলিশী বাহিনী কিভাবে শিক্ষার্থীদের এবং সাংবাদিকদের উপর হামলা করেছে। শুধুমাত্র ১১ জুলাই না ১৮ জুলাই ও আমাদের উপর হামলা করা হয়েছিল। যখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের আহত অবস্থায় এম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন পুলিশি বাহিনী এম্বুলেন্সকেও থামিয়ে দিয়েছে।তখন আমরা তাদেরকে প্রশ্নবিদ্ধ করলে তারা আমাদের উপরও হামলা করে। মিডিয়াকর্মীদের উপর হামলা করেও ফ্যাসিস্ট সরকার তাদের থামাতে পারেনি।আমরা সব সময় সত্যের পক্ষে ছিলাম। নতুন স্বাধীনতার আজ এক বছর হয়ে গেছে এখনো সাংবাদিকরা নিরাপদে সংবাদ সংগ্রহ করতে পারে না। সাংবাদিকতা শুধু একটি পেশা নয়, এখানে রয়েছে অবিচার ঠান্ডার মাঝে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর এক বিশাল কন্ঠে।
প্রধান আলোচক পিআইবি মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, “বাংলাদেশের সকল ছাত্র-জনতা, সাংবাদিকরা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। জুলাইয়ে সংবাদ সংগ্রহে রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বাহিনীর কাছে বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন সাংবাদিকরা। মনে রাখবেন, এই আন্দোলনে শহীদদের শেষ নিশ্বাস ত্যাগের ফসল আমরা স্বাধীন হয়েছি। শহীদের শেষ নিশ্বাসে আমরা বেঁচে আছি। তাদের শেষ নিশ্বাস এই বাতাসে মিশে আছে। সেই নিশ্বাস আমরা গ্রহণ করি৷”
তিনি আরও বলেন, “পৃথিবী ঘুরতে একবছর সময় লাগে। ঠিক তেমনি জুলাই এক বছর পরে আবারও এসেছে আমাদের মাঝে। জুলাইয়ে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে তারা বয়সে ছোট ও তাদের সংগঠন ছোট। ছোট সংগঠন নিয়ে তারা নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু জুলাইয়ের পর অর্থের অভাবে সাংস্কৃতিক সংগঠন তৈরি করতে পারছেন না। এর ফলে তারা হেরে যাচ্ছে। জুলাই হেরে যাচ্ছে।”
প্রধান অতিথি অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “জুলাই আন্দোলনে ছাত্ররা যেভাবে নিজেদের নেতৃত্বে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছে, আমি আশা করি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিও সব শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করবে। সাংবাদিকদের কার্যক্রম এমন হওয়া উচিত, যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থ ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করে। আপনারাই হচ্ছেন সেই শক্তি, যারা সমাজের শিক্ষিত অংশ হিসেবে সত্যকে তুলে ধরবেন। মনে রাখবেন, ‘জুলাই ২৪’ হঠাৎ করেই আসেনি। এদেশের মানুষ প্রমাণ করেছে, যদি দাবি ন্যায্য ও যৌক্তিক হয়, তাহলে পুরো জাতি তার পাশে দাঁড়ায়।”
বিশেষ অতিথি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, জুলাই আন্দোলনে মূল স্রোতের সাংবাদিকরা যে ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছিল ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা সেখানে ভূমিকা পালন করেছে। গত ষোলো বছরের ফ্যাসিজম এর কারণে ক্যাম্পাসগুলো একটা দলের নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছিল, সাধারণ ছাত্ররা তাদের মনের কথাগুলো বলা, সাংস্কৃতিক চর্চা করা, বিভিন্ন কো-কারিকুলার কার্যক্রমগুলো করতে ব্যার্থ হয়েছিল। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের আশা আকাঙ্ক্ষাগুলো সামনে নিয়ে আসছে ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি সাঈদ হাসান বলেন, “কুমিল্লার আন্দোলনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি অন্যান্য স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের অবদান অসামান্য। আর আন্দোলনের রসদ দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকরা। কুবিসাসের সদস্যরা জীবনের হুমকি নিয়ে আন্দোলনের ছবি, ভিডিও ফুটেজ ও লাইভ করে গিয়েছে।” এছাড়াও তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহত শিক্ষার্থী ও শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তনে ও আন্দোলনে নারী শিক্ষার্থীদের অবদান তুলে ধরেন।
উল্লেখ্য, সাময়িকীটি ২০২৪ সালের জুলাইয়ে কুমিল্লায় ঘটে যাওয়া ছাত্র-জনতার গণজাগরণ, রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন এবং রাজনৈতিক প্রতিরোধের ঘটনাবলিকে আহতদের ও সাংবাদিকদের চোখে তুলে ধরা হয়েছে।